
বিদেশে যাওয়ার আগে চাকরির প্রতিশ্রুতি, চুক্তিপত্র, ওয়ার্ক পারমিট; সবই যেন কাগুজে কথা। বাস্তবে হাজারো বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী প্রতিদিন প্রতারণা, শোষণ ও ন্যায়বিচারের অভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই ভয়াবহ বাস্তবতা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ কর্মী বিদেশ যাওয়ার আগে কোনো চাকরির চুক্তিপত্র পাননি, আর ৪৭ শতাংশ গন্তব্য দেশে পৌঁছেও ওয়ার্ক পারমিট পাননি। যারা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ বাস্তবে কোনো চাকরি পেয়েছেন, যার বেশির ভাগই ছিল না প্রতিশ্রুত খাতে।
বিশেষত কোভিড-পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবে এই প্রতারণার মাত্রা বেড়েছে। সিলেটের ২৬ বছর বয়সী আবদুল মুকিম চার লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরবে যান, প্রতিশ্রুতি ছিল হজযাত্রীদের হোস্টেলে চাকরি। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজই জোটেনি। এখন তিনি মদিনায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয়ে আছেন, দিন পার করছেন কাজের খোঁজে।
ওকাপের গবেষণা অনুযায়ী, ৩৬ শতাংশ অভিবাসী তিন মাসের মধ্যে এবং ৪০ শতাংশ ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন, মূলত অবৈধ ও প্রতারণামূলক নিয়োগের কারণে। দেশে ফিরে বিএমইটিতে অভিযোগ করলেও মাত্র ৩৯ শতাংশ অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে, যেখানে ক্ষতিপূরণ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা। অথচ তারা সরকারের নির্ধারিত ব্যয়ের তিন থেকে ছয় গুণ বেশি খরচ করে বিদেশে গিয়েছিলেন।
গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, ৮০ শতাংশ কর্মী অবৈধ সাব–এজেন্টের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন, যা আইনবিরুদ্ধ। ২২ শতাংশ কর্মীর মেডিকেল সনদ এবং ১৬ শতাংশের ওরিয়েন্টেশন সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে।
নারী গৃহকর্মীদের জন্য সরকার ‘জিরো কস্ট’ নীতি চালু করলেও ৬৫ শতাংশ নারী অভিযোগ করেছেন এজেন্টরা তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন। তাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার, ৭৯ শতাংশ বেতন পাননি, ৮০ শতাংশ খাবার থেকে বঞ্চিত এবং ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
ওকাপের চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম বলেন, “বিএমইটি নিয়োগ এজেন্টদের লাইসেন্স দেয় এবং সালিশ ব্যবস্থাও চালায়; এই দ্বৈত ভূমিকা স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে।” তিনি আরো বলেন, “সালিশের জন্য আলাদা জনবল বা প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, ফলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না।”
এই গবেষণা প্রমাণ করে, বিদেশে যাওয়ার আগে ও পরে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি সুরক্ষিত, স্বচ্ছ ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থার অভাব রয়েছে, যা শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানবিক সংকটও তৈরি করছে।
তথ্যসূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড