
শহরের কোন এলাকায় কে থাকেন, তা দিয়েই অনেক সময় কোনো মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার একটি চিত্র মেলে। আর যদি সেটি হয় বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহরগুলোর একটিতে, তবে তার সম্পদ ও প্রভাব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে না। বিশ্বের যেসব শহরে অতিধনীরা থাকেন বা ধনীদের বসবাসের জন্য জনপ্রিয় যেসব শহর, সেগুলোর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র থাকে। বিশ্বজুড়ে যেসব শহর ধনীদের কাছে বসবাসের জন্য পছন্দের শীর্ষে, সেগুলো শুধু আর্থিক দিক থেকেই নয়, বরং জীবনমান, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক সংযোগের দিক থেকেও উল্লেখ করার মতো। ২০২৫ সালের হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স ও নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের এক যৌথ প্রতিবেদনে বিশ্বের এমন ১০টি শহরের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ধনীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
১. নিউ ইয়র্ক সিটি
বসবাসের জন্য ধনীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটি। এখানে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ মিলিয়নিয়ার, ৮১৮ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ৬৬ জন বিলিয়নিয়ার থাকেন। সেন্টিমিলিয়নিয়ার বলতে বোঝায়, যাদের সম্পদের পরিমাণ কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ডলার। অর্থনীতির পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম, ফ্যাশন ও প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবেও খ্যাত শহরটি। উন্নত গণপরিবহন, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ শহরকে ধনীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
২. সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো ও আশপাশের বে এরিয়া প্রযুক্তিশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখানে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ মিলিয়নিয়ার, ৭৫৬ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ৮২ বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন। সিলিকন ভ্যালি, উদ্ভাবনী পরিবেশ ও উচ্চ জীবনমান ধনীদের সেখানে বসবাসের জন্য আগ্রহী করে তোলে।
৩. টোকিও
জাপানের টোকিও এশিয়ার অন্যতম ধনী শহর। শহরটিতে ২ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ মিলিয়নিয়ার, ২৬২ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ১৮ বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন। শহরটি উন্নত প্রযুক্তি, নিরাপদ পরিবেশ ও উচ্চমানের জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য টোকিওকে বসবাসের জন্য ধনীদের পছন্দের শীর্ষে রেখেছে।
৪. সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ মিলিয়নিয়ার, ৩৩৩ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ৩০ বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। শহরটি করসুবিধা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ও উন্নত অবকাঠামোর জন্য পরিচিত। এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ায় ধনীদের কাছে থাকার জন্য সিঙ্গাপুর আকর্ষণীয়।
৫. লস অ্যাঞ্জেলেস
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ২ লাখ ২০ হাজার ৬০০ মিলিয়নিয়ার ও ৪৫ বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন। শহরটি বিনোদন, প্রযুক্তি ও রিয়েল এস্টেট খাতের জন্য বিখ্যাত। উন্নত জীবনযাত্রা, সমুদ্রসৈকত ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কারণে ধনীরা শহরটিকে বসবাসের জন্য বেছে নেন।
৬. লন্ডন
লন্ডনে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ মিলিয়নিয়ার, ৫১৬ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ৩৩ বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। পুরোনো এ শহর আর্থিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। উন্নত গণপরিবহন, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা লন্ডনকে ধনীদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
৭. প্যারিস
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১ লাখ ৬০ হাজার ১০০ মিলিয়নিয়ার, ২৭৭ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ২২ বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। শহরটি ফ্যাশন, শিল্প, রন্ধনশিল্প ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। পশ্চিম ইউরোপের প্রথম দিকের এ আধুনিক শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনা, উন্নত অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করে।
৮. হংকং
চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ মিলিয়নিয়ার, ৩৪৬ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ৪০ বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন। শহরটি এশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। করসুবিধা, উন্নত অবকাঠামো ও বৈশ্বিক সংযোগ হংকংকে ধনীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
৯. সিডনি
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ মিলিয়নিয়ার, ২২৪ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ২২ বিলিয়নিয়ার বসবাস করেন। শহরটি উন্নত জীবনযাত্রা, সমুদ্রসৈকত ও স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য পরিচিত। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা ও নিরাপদ পরিবেশ সিডনিকে ধনীদের কাছে বসবাসের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
১০. শিকাগো
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ১ লাখ ২৭ হাজার ১০০ মিলিয়নিয়ার, ২৯৫ সেন্টিমিলিয়নিয়ার ও ২৫ বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। শহরটি আর্থিক, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তি খাতের জন্য সুপরিচিত। উন্নত অবকাঠামো, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ শিকাগোকে ধনীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো