
বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ঘটনা ঘটছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করছে। চীনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভারত সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যপ্রাচ্য সফর; এই তিনটি ঘটনা বৈশ্বিক কূটনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।
চীন-ইরান সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি মঙ্গলবার চীন সফর করছেন, যা ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনার তৃতীয় রাউন্ডের পূর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চীনকে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে। ২০২৪ সালে চীন ইরানের সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা ছিল, যা ইরানের মোট রপ্তানির প্রায় ৭৭%। এই সফর ইরানের কৌশলগত অংশীদার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টার অংশ।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য আলোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বর্তমানে ভারত সফর করছেন, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করছেন। এই আলোচনার লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ট্যারিফ ছাড়ের বিনিময়ে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এই সফরকালে ভারতের কৃষক সংগঠনগুলো স্থানীয় কৃষির ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মোদির কাতার সফর ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি কাতার সফর করেছেন, যেখানে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ভারত ও কাতার সম্পর্ককে "কৌশলগত অংশীদারিত্বে" উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে সহায়ক হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, উভয় দেশ আগামী পাঁচ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে কাজ করবে।
বৈশ্বিক কূটনীতিতে নতুন সমীকরণ
এই তিনটি ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে। চীন ও ইরানের ঘনিষ্ঠতা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করছে। একই সময়ে ভারত ও কাতার তাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের প্রভাব বাড়াতে সহায়ক হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাগুলো বিশ্ব রাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে এবং আগামী দিনে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট