
যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় অভিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এরা দেশের বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। ১৯৬৫ সালে অভিবাসন আইনের সংস্কারের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪.১ মিলিয়ন এশীয় অভিবাসী বসবাস করছেন, যা ১৯৬০ সালের তুলনায় প্রায় ২৯ গুণ বেশি। এই বৃদ্ধি শুধু সংখ্যা নয়, বরং এশীয় অভিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদানেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
উচ্চ শিক্ষিত ও দক্ষ পেশাজীবী
এশীয় অভিবাসীরা সাধারণত উচ্চ শিক্ষিত এবং দক্ষ পেশাজীবী। ২০১৯ সালে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এশীয় অভিবাসীর মধ্যে ৫৪% ব্যক্তির উচ্চতর শিক্ষা ছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গড়ের তুলনায় ১০% বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে এশীয় জনগণের মধ্যে ৫১% লোকের স্নাতক বা তার চেয়ে বেশি শিক্ষা ছিল, যা মোট আমেরিকান জনসংখ্যার ৩৯% এর চেয়ে অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে, এশীয় অভিবাসীরা উচ্চ শিক্ষার দিকে অধিক মনোযোগী এবং দক্ষ পেশায় নিয়োজিত।
অর্থনৈতিক অবদান
এশীয় অভিবাসীরা শুধু সামাজিক অবদানই রাখছেন না, বরং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ২০১৯ সালে এশীয় অভিবাসীর দ্বারা পরিচালিত ব্যবসাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ১২% এরও বেশি। ২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি এশীয় পরিচালিত ছোট ব্যবসা ছিল, যা প্রায় ৭৫ হাজার কোটি ডলার বার্ষিক আয় তৈরি করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় অভিবাসীরা চাকরির বাজারে ৩ লাখের বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
নাগরিকত্ব লাভের প্রবণতা
এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৬১% এশীয় অভিবাসী নাগরিকত্ব লাভ করেছেন, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় ৫% বেশি। ২০১৯ সালে প্রায় ১.৭ মিলিয়ন এশীয় অভিবাসী নাগরিকত্ব লাভ করেছেন এবং এর মধ্যে ৮০% ছিলেন ভারতীয়, চীনা ও ফিলিপাইনের জনগণ। নাগরিকত্ব অর্জন তাদের শুধু ভোটাধিকার দেয় না, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।
সমাজে একীভূতকরণ
এশীয় অভিবাসীদের সমাজে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া বেশ ধীরে হলেও চলছে। বিশেষ করে যাদের মধ্যে পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া আরো সহজ। ২০১৯ সালে এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে ৪৫% এর বেশি ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন, যা তাদের একীভূতকরণ প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুত করেছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
এশীয় অভিবাসীদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে এশীয়দের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মৌখিক নিপীড়ন বেড়েছে। ২০২০ সালে আমেরিকায় এশীয় জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের সংখ্যা ১৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা তাদের জন্য একটি বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া কিছু অভিবাসী এখনো নিম্ন আয়ের চাকরিতে কর্মরত রয়েছেন, বিশেষ করে লাতিনো ও দক্ষিণ এশীয় জনগণের মধ্যে।
যদিও আমেরিকায় এশীয় অভিবাসীদের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবুও তারা দেশের বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে শিক্ষা, ব্যবসা, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতে বিশাল অবদান রেখে চলেছেন। ২০১৫-২০১৭ সালের মধ্যে এশীয় অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জাতীয় আয়ের ২.৫% অবদান রেখেছেন, যা ৬৪৮ বিলিয়ন ডলারের সমান। এসব অভিবাসী মার্কিন সমাজে একদিকে যেমন বৈচিত্র্য আনছেন, তেমনি তারা তাদের শ্রম, দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা মনোভাবের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
তথ্যসূত্র: মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট