
পর্তুগালের মেধাবী তরুণদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ তাদের ধরে রাখতে সরকার কর কমানোর মতো উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু তারপরও তরুণরা দেশে থাকতে চান না৷ কিন্তু কেন?
সদ্য চিকিৎসাবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করা কারোলিনা আজেভেদোও দেশ ছাড়তে চান৷ কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘‘প্রথম বছরের মূল বেতন প্রতি মাসে ১,৭০০ ইউরো৷ আমি এক বছর পর্তুগালে কাজ করব যেন অর্থ সাশ্রয় করতে পারি, আর জার্মান ভাষাটা শিখতে পারি৷ বড় শহরগুলোতে বাসা ভাড়া হিসেবে আপনাকে প্রায় ৮০০ বা ৯০০ ইউরো দিতে হয়৷
এক বছর কাজ করার পর আর দেশে থাকতে চান না কারোলিনা। কারণ, তিনি শুধু বেতন নিয়ে হতাশ নন৷
পড়াশোনার সময় কারোলিনা বিদেশে ইন্টার্নশিপ করেছেন এবং সেখানে সবকিছু কীভাবে চলে তা দেখেছেন৷ তাই তিনি এখন জার্মান ভাষা শিখতে চান যেন তিনি সুইজারল্যান্ডে চাকরির আবেদন করতে পারেন৷
কারোলিনা বলেন, ‘‘আমার ভাই সেখানে কাজ করেন৷ তার কাছ থেকে আমি সরাসরি তথ্য পাই৷ সে কারণে আমি নিশ্চিত, আমি কোনো মায়ার পেছনে ছুটছি না৷''
পর্তুগালের সমস্যাগুলোর কথা রাজনৈতিক বিলবোর্ডে লেখা আছে- খুব কম জরুরি কক্ষ, আবাসনের অভাব এবং অবশ্যই মেধা পাচার৷ পর্তুগিজ সরকার জানে, অনেক তরুণ দেশ ছেড়ে যাচ্ছে এবং সে কারণে তারা তাদের কর মওকুফ করতে চায়৷
করবিষয়ক সরকারি কর্মকর্তা ক্লাউদিয়া ডুর্য়াতে বলেন, ‘‘গত এক দশক ধরে আমরা একটি মৌলিক জনসংখ্যাগত সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছি৷ বর্তমানে ভৌগোলিকভাবে পর্তুগালের কাছাকাছি দেশগুলোর তুলনায় আমাদের কম্পিটিটিভনেস, উৎপাদনশীলতা এবং বেতন কম হওয়ার সমস্যা আছে৷ আমরা বিশ্বাস করি, এই উদ্যোগ সাড়ে তিন থেকে চার লাখ তরুণ-তরুণীর উপর প্রভাব ফেলতে পারবে৷''
লিসবনকে স্টার্ট-আপের মক্কা বিবেচনা করা হয়৷ বায়োটেক কোম্পানি মাইক্রোহার্ভেস্টের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানির শাখা লিসবনের ট্যাগাস নদীর তীরে আছে, যেমনটা আছে জার্মানির হামবুর্গেও৷
মাইক্রোহার্ভেস্টের প্রতিষ্ঠাতা লুসিয়া ক্রুজ বলেন, ‘‘লিসবনে আমাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই, এখানেও উদ্ভাবনী কাজ করা সম্ভব এবং তার সুযোগ আছে৷''
পর্তুগালে বড় ও মাঝারি কোম্পানির অভাব আছে৷ আর করের বোঝা এতটাই বেড়েছে, এমনকি উৎসাহী উদ্যোক্তারাও স্বীকার করছেন, দীর্ঘমেয়াদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা৷
পর্তুগাল তরুণদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেয়৷ তাদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থাও আছে৷ কিন্তু তারপরও তাদের বেশির ভাগ দেশে থাকতে চাইছেন না৷ যেমন ২৭ বছর বয়সী টিয়াগো৷ বর্তমানে তিনি লিসবনের একটি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন৷ তবে কয়েক মাসের মধ্যে ডেনমার্ক চলে যেতে চান৷
টিয়াগো বলেন, ‘‘আমি দেখেছি সেখানে কাজ এবং পরিবারের মধ্যে একটি খুব স্পষ্ট ও লক্ষণীয় ভারসাম্য রয়েছে৷ আমি শুধু বেতনের কথা বলছি না, আমি মানুষের ভালো ব্যবহারের কথা বলছি, সরকারি পরিষেবার মান, এমনকি গণপরিবহনের কথাও বলছি৷''
তার মানে, নিজ দেশের তরুণদের ধরে রাখার জন্য শুধু কর কমানোই যথেষ্ট নয়৷
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে