লিথুয়ানিয়ায় বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার তৃতীয় দেশের নাগরিক এবং প্রায় ১৭ হাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক কাজ করছেন। অর্থাৎ লিথুয়ানিয়ার মোট কর্মশক্তির প্রায় ১১ শতাংশ এখন বিদেশি শ্রমিক।  

২০২০ সালে লিথুয়ানিয়ায় মাত্র ৬ হাজার ৮০০ জন তৃতীয় দেশের শ্রমিক কাজ করছিলেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক ছিলেন মাত্র ১০০ জন। ২০২১ সালে এ সংখ্যা তিন গুণ হয়। ২০২২ সালে ইউক্রেন, বেলারুশ ও রাশিয়া থেকে অভিবাসন প্রবাহ বাড়ায় বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৬০০ জনে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালে ২০ গুণে পৌঁছেছে।  

কর্মসংস্থান দপ্তরের প্রতিনিধি মিলদা ইয়ানকাউস্কিয়েনে জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিদেশি শ্রমিক রাজধানী ভিলনিয়াস, কাওনাস এবং ক্লাইপেদা শহরে কাজ করেন। প্রায় অর্ধেক শ্রমিক পরিবহন ও লজিস্টিক খাতে নিয়োজিত। এছাড়া নির্মাণ, উৎপাদন, হসপিটালিটি এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাতেও তাদের উপস্থিতি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা মূলত নির্মাণ, প্রশাসনিক কাজ এবং গ্রাহকসেবা খাতে কাজ করেন। প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক পরিবহন ও লজিস্টিক খাতে কর্মরত।  

২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, লিথুয়ানিয়ায় সবচেয়ে বেশি শ্রমিক এসেছে বেলারুশ থেকে, প্রায় ৪৬ হাজার ৫৪৪ জন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউক্রেন, ৩৯ হাজার ৭৯১ জন। তৃতীয় স্থানে উজবেকিস্তান, ৭ হাজার ১৯৯ জন। এছাড়া রাশিয়া থেকে এসেছে ৬ হাজার ৯৪ জন। তাজিকিস্তান, ভারত, কিরগিজস্তান, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, জর্জিয়া ও মলদোভা থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক লিথুয়ানিয়ায় কাজ করছেন।  

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটা জানিয়েছে, বিদেশি শ্রমিকরা লিথুয়ানিয়ার শ্রম সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এ বৃদ্ধির ফলে আয় বৈষম্যও স্পষ্ট হয়েছে। স্ট্রাটার প্রধান নীতি বিশ্লেষক গিয়েদ্রে বেলেকিয়েনে বলেন, সাধারণ দক্ষতার কাজে বিদেশি শ্রমিকরা স্থানীয়দের তুলনায় গড়ে ১১ শতাংশ কম আয় করেন। এটি বৈষম্যের ঝুঁকি তৈরি করছে।  

অন্যদিকে উচ্চ দক্ষতার কাজে বিদেশি শ্রমিকরা স্থানীয়দের তুলনায় গড়ে ১৩ শতাংশ বেশি আয় করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লিথুয়ানিয়ায় বিরল দক্ষতার শ্রমিকের অভাব থাকায় নিয়োগকর্তারা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আকৃষ্ট করতে বেশি বেতন দিতে রাজি হচ্ছেন।  

সব মিলিয়ে লিথুয়ানিয়ায় বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একদিকে শ্রম সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করছে, অন্যদিকে আয় বৈষম্যের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।