অসহায়, ভাগ্য বিড়ম্বিত লিবিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৭
লিবিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের সন্তানরা আজ এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। তারা শুধু আইনি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। লিবিয়া আপডেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই শিশুরা একদিকে সমাজের অবহেলার শিকার, অন্যদিকে ভবিষ্যতে সামাজিক অস্থিরতার সম্ভাব্য উৎস হয়ে উঠছে।
লিবিয়ায় হাজার হাজার অভিবাসী পরিবার রয়েছে, যারা যুদ্ধ, দারিদ্র্য বা রাজনৈতিক সংকট থেকে পালিয়ে এসেছে। তাদের সন্তানরা জন্ম থেকেই কোনো বৈধ পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্ব পায় না। ফলে তারা স্কুলে ভর্তি হতে পারে না, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পায় না, এমনকি কোনো ধরনের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায়ও আসে না।
এই শিশুরা বেড়ে উঠছে অনিশ্চয়তা, ভয় ও বঞ্চনার মধ্যে। অনেক সময় তারা মানব পাচার, শিশু শ্রম, এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। কারণ, তাদের জীবনে কোনো স্থিতিশীলতা বা সঠিক দিকনির্দেশনা নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই শিশুরা “টিকিং টাইম বোম” বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের সম্ভাব্য ঝুঁকি, যা ভবিষ্যতে লিবিয়ার সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শিশুদের অবহেলা করা হলে তারা ভবিষ্যতে অপরাধী চক্রে যুক্ত হতে পারে, যা দেশটির নিরাপত্তা ও সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিতে পারে। অপরদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ করা জরুরি।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিওগুলো লিবিয়ায় অভিবাসী শিশুদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সীমিত বাজেট ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এই উদ্যোগগুলো কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, লিবিয়ার বর্তমান অভিবাসন নীতিতে শিশুদের জন্য কোনো আলাদা সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা আইনি ঝুঁকিতে থাকে এবং যে কোনো সময় আটক বা ফেরত পাঠানোর শিকার হতে পারে, এমনকি যদি তারা লিবিয়াতে জন্মগ্রহণ করেও।
এই সংকট সমাধানে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ নীতিতে পরিবর্তন। শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি লিবিয়ার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
এই শিশুদের জীবন যেন অবহেলার শিকার না হয়, সে জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে তারা শুধু নিজেদের নয়, পুরো সমাজের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠবে।
logo-1-1740906910.png)