লিবিয়ার উপকূলে ইউরোপগামী একটি অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ১৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, লিবিয়ার আল জাওইয়া থেকে যাত্রা করা কাঠের নৌকাটি সমুদ্রে ভাসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চ ঢেউয়ের কারণে উল্টে যায়।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, ২৭ অক্টোবর রাতে সাবরাথা শহরের কাছে নৌকাটি ডুবে গেলে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়, যা মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চলে। সুরমান বন্দরের কাছাকাছি উপকূল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকর্মীরা মরদেহগুলো সাদা ব্যাগে ভরে অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছেন এবং জীবিতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন।
আইওএম জানিয়েছে, এই ঘটনায় ৬৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি। এছাড়া রয়েছেন ৩১ জন সুদানি (একজন নারী ও এক শিশু), ১২ জন পাকিস্তানি এবং তিনজন সোমালিয়ান। রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধারকৃতের সংখ্যা ৯০ হলেও আইওএমের হিসাবে তা ৬৪। নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি রয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আইওএমের ‘মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট’ অনুযায়ী, চলতি বছর সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুটে ১ হাজার ৪৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। এর মধ্যে ৫২৭ জনের মৃত্যু বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে লিবিয়ার উপকূলে। সংস্থাটি বলেছে, “এই নৌকাডুবি আবারো স্মরণ করিয়ে দেয়, নিরাপত্তা ও সুযোগের খোঁজে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামা মানুষদের কতটা ভয়াবহ ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়।”
এই মাসের শুরুতে লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত একটি চিকিৎসাকেন্দ্র জানায়, টিউনিশিয়ার সীমান্তবর্তী উপকূলীয় এলাকা থেকে দুই সপ্তাহে ৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আইওএম জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে তারা লিবিয়ার স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। সংস্থাটি নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন পথ প্রসারিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশটি এখনো ত্রিপোলি ও বেনগাজির প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারে বিভক্ত। এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সংঘাত ও দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসীরা লিবিয়ায় এসে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামছেন।
logo-1-1740906910.png)