
ইতালির সঙ্গে লিবিয়ার অভিবাসী চুক্তির বিরুদ্ধে শনিবার রোমে শত শত অভিবাসী ও অধিকারকর্মী বিক্ষোভ করেছেন। এর ঠিক এক দিন আগে ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকাডুবিতে প্রায় ২০ জন অভিবাসীর মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দেয়। বার্তা সংস্থা এএফপি এ সংবাদ জানায়।
২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত এবং আগামী মাসে নবায়নের অপেক্ষায় থাকা এই চুক্তির আওতায় ইতালি লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। বিনিময়ে, লিবিয়া অভিবাসীদের ইতালিতে যাত্রা রোধ এবং সমুদ্রে আটক অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব পালন করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তিকে ‘নির্মম’ ও ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাব-সাহারান আফ্রিকার অভিবাসীরা লিবিয়ায় তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, লিবিয়ার উত্তরাঞ্চলে অভিবাসীদের বন্দি করে রাখা হয়, যেখানে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রতিনিয়ত থাকে। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তারা ভূমধ্যসাগরে প্রাণ হারানো অভিবাসীদের স্মরণ করেন।
মানবাধিকার কর্মী সরিতা ফ্রাতিনি বলেন, “মধ্য ভূমধ্যসাগরে একটি মৃত্যুর রেখা রয়েছে।” তিনি জানান, লিবিয়া থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের আটক কেন্দ্রে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ফ্রাতিনি ইতালির বিরুদ্ধে মামলা করতে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা দিয়ে আসছেন।
আইভরি কোস্টের ৪৬ বছর বয়সী আইরিন দিয়া জানান, তিনি তিনবার ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমবারেই ১২ জন সঙ্গী মারা যান। পরে লিবিয়ান বাহিনী তার নৌকাটি থামিয়ে আজ-জাওইয়াহ নামক কুখ্যাত আটক কেন্দ্রে পাঠায়, যেখানে তিনি ছয় মাস কাটান। “আমি নিজের চোখে নারীদের ধর্ষিত হতে দেখেছি,” বলেন তিনি।
এনজিওগুলো জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ার কোস্টগার্ড অভিবাসী বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করছে। গত সপ্তাহে মাল্টার দক্ষিণ-পূর্বে ১১৩ জন অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকায় গুলির ঘটনা ঘটে। ইতালির কোস্টগার্ড জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত অভিবাসীরা তাদের ওপর গুলি চালানোর কথা নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এক হাজারের বেশি অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছে এবং অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।