তারা এসেছিলেন জীবনের খোঁজে। কেউ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে, কেউ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে, কেউ শুধু একটু নিরাপদ আশ্রয়ের আশায়। কিন্তু লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ত্রিপোলির উপকূলে ৬১ জন অভিবাসীর মরদেহ যখন উদ্ধার হলো, তখন সেই স্বপ্নগুলো নিঃশব্দে থেমে গেল।
রয়টার্সের প্রতিনিধির কাছে ত্রিপোলির মেডিকেল সেন্টার জানিয়েছে, মরদেহগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কারো শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন, কারো দেহে ক্ষত; সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পথে হয়তো পাচারকারীদের হাতে পড়ে, অথবা সমুদ্র কিংবা মরুভূমিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
লিবিয়া বহু বছর ধরে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে যাওয়ার অভিবাসীদের জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং সীমান্তে দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এই পথ হয়ে উঠেছে মৃত্যুর ফাঁদ। মানব পাচারকারীরা প্রতিদিনই নতুন যাত্রী খুঁজে নেয়, যাদের স্বপ্নকে পুঁজি করে তারা গড়ে তোলে ভয়ংকর এক ব্যবসা।
এই ৬১ জনের মৃত্যুর খবর শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং প্রতিটি দেহের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি গল্প- একটি পরিবার, একটি আশা, একটি ভবিষ্যৎ। হয়তো কেউ ছিলেন বাবা, কেউ মা, কেউ ভাই বা বোন। হয়তো কেউ জীবনের প্রথম ভ্রমণে পা রেখেছিলেন, কেউ শেষ।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, লিবিয়ায় অভিবাসীদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তারা প্রায়ই বন্দি হন, নির্যাতিত হন, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে ভোগেন। অনেক সময় তাদের পরিবার জানতেও পারে না, তারা কোথায় আছেন বা আদৌ জীবিত কিনা।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আবারো আহ্বান জানিয়েছে, মানব পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা বলছে, এই ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য, যদি বিশ্ব একসঙ্গে কাজ করে।
logo-1-1740906910.png)