
জার্মানিতে নতুনভাবে বসবাস শুরু করলে যে কাজটি সবচেয়ে আগে করতে হয়, তা হলো বাসস্থান নিবন্ধন বা ‘Wohnsitz anmelden’। এটি শুধু একটি নিয়ম নয় বরং প্রবাস জীবনের প্রায় সব নাগরিক সুবিধা গ্রহণের প্রথম পদক্ষেপ। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, স্বাস্থ্যবীমা গ্রহণ, স্কুলে ভর্তি, ট্যাক্স নম্বর পাওয়া; সবকিছুই এই নিবন্ধনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাই জার্মানিতে পা রাখার পর এই কাজটি সময়মতো সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি।
জার্মান আইন অনুযায়ী, কেউ যদি নতুন বাসায় ওঠেন, তাহলে ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে ঠিকানা নিবন্ধন করতে হয়। এই সময়সীমা অতিক্রম করলে জরিমানার মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক শহরে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার সুযোগ থাকলেও নিবন্ধনের জন্য সরাসরি গিয়ে কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
বাসস্থান নিবন্ধনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে আপনার বৈধ পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র, বাসার মালিকের কাছ থেকে পাওয়া ‘Wohnungsgeberbestätigung’ (যা নিশ্চিত করে আপনি ওই বাসায় উঠেছেন) এবং পূরণ করা নিবন্ধন ফর্ম। অনেক শহরে এই ফর্ম অনলাইনে পাওয়া যায়, যা প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে হয়। যদি আপনি পরিবারসহ নিবন্ধন করতে চান, তাহলে পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র এবং সম্পর্কিত কাগজপত্রও সঙ্গে নিতে হবে।
বাসা পরিবর্তন করলে আবারো নতুন ঠিকানায় নিবন্ধন করতে হয়। পুরনো ঠিকানা বাতিল করার প্রয়োজন নেই, নতুন নিবন্ধনই যথেষ্ট। তবে বাসা পরিবর্তনের বিষয়টি সময়মতো জানানো না হলে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।
বিদেশ থেকে কেউ জার্মানিতে এসে দীর্ঘমেয়াদি বসবাস শুরু করলে তার জন্যও এই নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটি ভিসা, রেসিডেন্স পারমিট এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি, বাসা ভাড়া, শিশুদের স্কুলে ভর্তি কিংবা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য নিবন্ধিত ঠিকানা দেখাতে হয়।
বাসস্থান নিবন্ধন ছাড়া আপনি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না, স্বাস্থ্যবীমা নিতে পারবেন না, শিশুদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেন না, এমনকি ট্যাক্স নম্বর (Steuer-ID) পাবেন না। তাই এই নিবন্ধনকে হালকাভাবে না নিয়ে, সময়মতো সঠিকভাবে সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
জার্মানিতে নিয়ম-কানুন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাসস্থান নিবন্ধন একটি মৌলিক ধাপ। এটি সম্পন্ন হলে আপনার প্রবাস জীবন হবে ঝামেলামুক্ত, সুশৃঙ্খল এবং প্রশাসনিকভাবে নিরাপদ। নতুন বাসিন্দাদের জন্য এটি শুধু একটি নিয়ম নয় বরং জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির প্রথম সোপান।
তথ্যসূত্র: মেইক ইট ইন জার্মানি