
যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক যেমন তীব্র, বাস্তবতা তেমনই জটিল। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ সালে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম। তবে এই সংখ্যা এখনো ঐতিহাসিকভাবে অনেক বেশি।
এই অভিবাসীদের মধ্যে বড় অংশ এসেছে শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবায় কাজ করতে আসা কর্মী এবং ইউক্রেন ও হংকং থেকে বিশেষ মানবিক কর্মসূচির আওতায় আগত মানুষ। অর্থাৎ, অধিকাংশ অভিবাসী যুক্তরাজ্যে এসেছেন বৈধ ভিসা ও প্রয়োজনীয় অনুমতির ভিত্তিতে।
যদিও সরকার অভিবাসন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। বাস্তবতা হলো দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাত অভিবাসীদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিশেষ করে এনএইচএস (National Health Service)-এ বিদেশি কর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিকভাবে অভিবাসন নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য থাকলেও জনমত ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। ইউরোপিয়ান সোশ্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, এখন বেশির ভাগ ব্রিটিশ নাগরিক অভিবাসনকে দেশের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন। ৫৯% মানুষ মনে করেন অভিবাসন অর্থনীতির জন্য ভালো, ৫৮% বলেন এটি সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে এবং ৫৬% মনে করেন এটি যুক্তরাজ্যকে বসবাসের জন্য আরো ভালো জায়গা করে তোলে।
তবে অভিবাসনের চাপে বাড়ি, স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সংহতির ওপর প্রভাব পড়ছে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান অভিবাসনের সংখ্যা কমাতে বার্ষিক সীমা নির্ধারণ, ভিসা শর্ত কঠোর করা এবং নির্ভরশীলদের সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও অভিবাসন কমানোর পক্ষে, তবে তিনি নির্দিষ্ট সংখ্যা না দিয়ে বলেছেন, “আমার লক্ষ্য হলো অভিবাসনের সংখ্যা আমার দায়িত্ব নেওয়ার সময়ের চেয়ে কমিয়ে আনা”।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাজ্যে অভিবাসন এখন আর শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বরং এটি অর্থনীতি, জনমত ও মানবিক দায়িত্বের জটিল সমন্বয়। সংখ্যার পেছনে রয়েছে বাস্তব জীবনের গল্প, চাহিদা ও পরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান