
পর্তুগালের অভিবাসন নীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন অভিবাসীদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ। দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সুজা সম্প্রতি সরকারি ও পরিসংখ্যান সংস্থার অভিবাসনসংক্রান্ত তথ্যের অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে সরকার বলছে ২০২৪ সালে ১৫.৪৬ লাখ অভিবাসী বসবাস করছে অথচ জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা (INE) বলছে অভিবাসীদের মোট সংখ্যা ১০.৭৪ মিলিয়ন।
অন্যদিকে, অভিবাসী সম্প্রদায়ের নেতারা অভিযোগ করেছেন, নতুন অভিবাসন ও নাগরিকত্ব আইন তাদের পরিকল্পিত জীবনযাত্রাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। ভারতীয় ও বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পরিবার পুনর্মিলনের সময়সীমা বাড়ানো, নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সময়সীমা ৫ বছর থেকে ১০ বছরে উন্নীত করা এবং প্রশাসনিক জটিলতা তাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, পরিবার পুনর্মিলনের জন্য এখন অন্তত দুই বছর বৈধ রেসিডেন্সি থাকতে হবে এবং আবেদন প্রক্রিয়া ৯ মাস থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় নিতে পারে। এছাড়া “ট্যাক্সিট অনুমোদন” ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় অনেক আবেদনকারী দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অভিবাসীদের অভিযোগ, AIMA (Agency for Integration, Migration and Asylum) সময়মতো সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে অনেকের ভিসা ও রেসিডেন্সি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এবং তারা নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না। এই পরিস্থিতি অভিবাসীদের মধ্যে “অবাঞ্ছিত” হওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।
পর্তুগালের নতুন অভিবাসন নীতিতে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী, শিক্ষার্থী ও পর্তুগিজ ভাষাভাষীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের জন্য বৈষম্যমূলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রেসিডেন্ট মার্সেলো সতর্ক করেছেন, অভিবাসন বন্ধ করার মানে হবে পর্তুগালের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা, কারণ কৃষি, নির্মাণ ও পর্যটন খাতে অভিবাসীদের অবদান অপরিহার্য।
এই বাস্তবতায় পর্তুগালের অভিবাসন নীতিতে মানবিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি হয়ে উঠেছে। অভিবাসীদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, ন্যায্যতা ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে দেশটির বহুত্ববাদী পরিচয় হুমকির মুখে পড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য পর্তুগাল নিউজ