
ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে জীবন। সম্প্রতি প্রকাশিত নাগরিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও সামাজিক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার নতুন আশ্রয়প্রার্থী আবেদন করছেন। এর ফলে আবাসন সংকট, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশাসনিক জটিলতা বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, অনেক শহরে আশ্রয়কেন্দ্র পূর্ণ, ফলে নতুন আবেদনকারীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরো গভীর। অনেকেই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। এতে করে তারা আইনি সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে জার্মান প্রশাসনের নজরদারির আওতায় পড়ছেন, যা ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী আবাসনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রতিবেদনটি আরো জানায়, জার্মান সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের যাচাই প্রক্রিয়া কঠোর করেছে। এখন আবেদনকারীদের জন্মস্থান, পাসপোর্ট, ভ্রমণ ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ফলে ভুয়া তথ্য দিয়ে আবেদন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এছাড়া জার্মান ভাষা দক্ষতা, কর্মসংস্থান যোগ্যতা ও সামাজিক সংহতির মানদণ্ড পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। অনেক বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমালেও বাস্তবতা তাদের কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত অভিবাসন নীতিমালা পর্যালোচনা করা এবং প্রবাসীদের জন্য তথ্য, প্রশিক্ষণ ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে জার্মানিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উচিত আইন মেনে চলা, ভাষা শেখা ও সামাজিকভাবে সংহত হওয়ার চেষ্টা করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন গড়তে পারেন।
এই সংকট শুধু অভিবাসনের নয়, বরং একটি জাতির স্বপ্ন ও বাস্তবতার সংঘাত, যেখানে সঠিক প্রস্তুতি ছাড়া ইউরোপের পথে যাত্রা হতে পারে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো