Logo
×

Follow Us

ইউরোপ

জার্মানিতে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটা নিয়ে বিতর্ক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৬

জার্মানিতে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের কোটা নিয়ে বিতর্ক

জার্মানির স্কুলগুলোতে অভিবাসী শিশুর সংখ্যা সীমিত করার প্রস্তাব করেছেন শিক্ষামন্ত্রী কারিন প্রিয়েন। প্রস্তাবটির পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

জার্মান স্কুলে অভিবাসী শিক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করার জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেওয়ার মতো একটি 'কাল্পনিক মডেল' এর প্রস্তাবনা দিয়েছেন মধ্য-ডানপন্থি খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়নের (সিডিইউ) এই রাজনীতিবিদ। তিনি আরো বলেছেন, জার্মানির উচিত অন্যান্য দেশগুলো এ ব্যাপারে কী করে, সেটি বিবেচনা করে নির্ধারণ করা যে কোটা "শেষ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ, নাকি ৪০ শতাংশ" হবে।

জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শোয়ার্ৎস। তার ৩৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি অভিবাসী পরিবার থেকে এসেছে। তিনি মনে করেন, প্রিয়েনের এমন প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেছেন, "আমাদের এখানে জার্মানভাষী বা জার্মান হিসেবে যোগ্যতা অর্জনকারী ব্যক্তিদেরও কোটা নেই।"

প্রায় ২০ বছর আগে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া শিশুদের নিজের এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা বাতিল করে। ফলস্বরূপ, অনেক অভিভাবকই শোয়ার্ৎসের স্কুলের মতো স্কুলগুলোকে এড়িয়ে চলেন। জার্মান অভিভাবকদের মনে ভয়, অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি থাকায় এসব স্কুলের পরিবেশ তাদের সন্তানদের শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জার্মানির ৮ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই অভিবাসী বংশোদ্ভূত। কিন্তু তরুণদের মধ্যে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এই হার অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, বার্লিনের পরিসংখ্যান অফিসের মতে, সেখানকার জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ শিশু এবং শহরে বসবাসকারী ৫৫ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী অভিবাসী বংশোদ্ভূত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, যেমন নিউকোলনে এই সংখ্যা ৭০ শতাংশেরও বেশি।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন জার্মান শিক্ষা গবেষক ক্লাউস হুরেলমান। এর ফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি। হুরেলমান বলেন, "মন্ত্রীর প্রস্তাবটি বোধগম্য, কারণ শিশুর ব্যাকগ্রাউন্ড অনুসারে ক্লাস এবং শিক্ষার মিশ্রণ করা হলে স্পষ্টতই আরো ভালোভাবে কাজ করা যাবে।"

তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে প্রিয়েনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গেলে বৈষম্য হতে পারে এবং বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। তিনি বলেন, "এর ফলে ভুল বোঝাবুঝি এবং বৈষম্য তৈরি হলে তার চেয়ে সম্ভাব্য সুবিধাকে বড় করে দেখা যাবে না। যেসব শিশু এবং তরুণের ভাষাগত সমস্যা রয়েছে, সেসব শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি হওয়া স্কুলগুলোকে সমর্থন করার পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে সেটি বরং ভালো হবে।"

জার্মান স্কুলগুলোতে অভিবাসী কোটা চালু করার প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে জার্মানির ফেডারেল ছাত্র সংগঠন- বুন্ডেসশুলার কনফারেন্স।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, এই প্রস্তাবের ফলে একটি বিপজ্জনক বার্তা যেতে পারে, যে সব শিশুকে সমানভাবে স্বাগত জানানো হচ্ছে না। সংগঠনটি মনে করে, এই ধরনের কোটা একটি ন্যায্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে না, বরং শিশুদের ওপর কালিমালেপন করে। একজন ব্যক্তি কোত্থেকে এসেছে, সেটা কখনোই তার শিক্ষার সুযোগের মানদণ্ড হওয়া উচিত নয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্কুলগুলো অংশগ্রহণের স্থান হওয়া উচিত, বর্জনের নয়।

তবে মন্ত্রীর একটি প্রস্তাবের সঙ্গে সংগঠনটি একমত পোষণ করেছে। তারা বলেছে, "আমরা কারিন প্রিয়েনের প্রস্তাবিত চার বছর বয়সী শিশুদের জন্য জার্মান ভাষার যোগ্যতা পরীক্ষার পক্ষে। তবে সেটা অবশ্যই সব জায়গায় চালু করতে হবে এবং জার্মানির সব শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে, কেবল অভিবাসী পটভূমির শিক্ষার্থীদের জন্য নয়। যদি এর ফল অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে সুনির্দিষ্ট এবং ব্যাপক সহায়তা চালু করতে হবে, যা হবে প্রাথমিক, বাধ্যতামূলক এবং কার্যকর। প্রতিটি শিশু যাতে একই সুযোগ নিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করার এটিই একমাত্র উপায়।"

তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস

Logo