ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ফরাসি উপকূল থেকে মাত্র এক দিনেই ১ হাজার ১৯৪ জন অনিয়মিত অভিবাসী যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন৷ ৩১ মে ১৮টি ছোট নৌকায় করে অভিবাসীরা ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছান৷ চলতি বছরে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ আগমন৷ 

চলতি বছর এখন পর্যন্ত সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যা হয়েছে ১৪ হাজার ৮০৮৷ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকার ইংলিশ চ্যানেলে ছোট নৌকা কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তারপরও এই সংখ্যাটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে৷

ফরাসি উপকূলে দেশটির পুলিশের কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সেগুলো বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ এতে দেখা যায়, ফরাসি পুলিশের সদস্যরা সৈকতে অভিবাসীদের নৌকা ছাড়ার সময় উপস্থিত থাকলেও তাদের থামাতে চেষ্টা করেনি৷ 

বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনে বিশেষ করে রক্ষণশীল মিডিয়া এবং রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমুদ্র আইন অনুযায়ী তারা তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারবে যখন নৌকাগুলো পানিতে থাকে এবং ত্যাদের জীবন রক্ষার প্রয়োজন হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ২০২৭ সাল পর্যন্ত একটি চুক্তি নবায়ন করেছে৷ যার আওতায় যুক্তরাজ্য ফরাসি কর্তৃপক্ষের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অর্থায়ন করছে৷

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো চ্যানেলে নতুন কৌশলের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা চাই ফরাসি বাহিনী এখন থেকে পানিতে থাকা নৌকাগুলোকেও থামাতে পারে৷ কারণ পাচারকারীরা এখন সরাসরি পানি থেকে অভিবাসীদের তুলে নিচ্ছে, যাতে সৈকতে পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে যাওয়া যায়”৷

যুক্তরাজ্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘রিটার্ন হাব’ বা প্রত্যাবাসন কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে৷ ইরাক, জার্মানি, সার্বিয়া, কসোভোসহ একাধিক দেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তিও করেছে লন্ডন৷

সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ‘‘এই সরকার অভিবাসন সমস্যার প্রতিটি ধাপে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েছে”।

২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০৫ জন অভিবাসী চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিলেন৷ সে বছর মোট ৪৫ হাজার ৭৭৪ জন অভিবাসী এসেছিলেন৷

২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৬ হাজার ৮০০-এ৷ চলতি বছরের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে৷

চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৮ জন৷ 

এদিকে গেল সপ্তাহান্তে ফরাসি উপকূলে পৃথক চারটি অভিযানে ১৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ফ্রান্সের উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ফোর্ট-মাহোঁর উপকূলে ৭৮ জন, উইমেরুর কাছে ইঞ্জিন বিকলের পর ৬১ জন, গ্র্যান্ড-ফোর্ট-ফিলিপ উপকূলে ৯ জন এবং ডানকির্ক উপকূলে ৩৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷

তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস