
২০২৪ সালে জার্মানির মোট জনসংখ্যার মধ্যে অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ১২ লাখ৷ সংখ্যাটি তার আগের বছরের তুলনায় চার ভাগ বেশি৷
দেশটির ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস ২২ মে এ তথ্যটি দিয়েছে৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, এই সংখ্যাটি জার্মানির মোট জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ছয় শতাংশ৷ অর্থাৎ দেশটিতে বসবাসরত মানুষের প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের অভিবাসন ইতিহাস বা পটভূমি রয়েছে৷
অভিবাসনের মধ্য দিয়ে ১৯৫০ সাল থেকে যারা জার্মানিতে আসতে শুরু করেছেন, তাদের বলা হচ্ছে প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী৷ দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিবাসী হলেন তারাই, যাদের জন্ম অভিবাসী পরিবারে হয়েছে৷
প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক কোটি ৬১ লাখের মতো, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৯ দশমিক ছয় শতাংশ৷ এছাড়া তাদের সরাসরি বংশধরদের মধ্যে ৫২ লাখের মতো মানুষ জার্মানিতে বসবাস করছেন৷
পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য বলছে, এছাড়া জার্মানিতে জন্ম নেয়া ৪১ লাখ মানুষের বাবা এবং মায়ের মধ্যে অন্তত একজন অভিবাসী৷ তবে অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন মানুষের হিসাবে তাদের রাখা হয়নি৷
জার্মানিতে বসবাসরত ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সি মানুষের মধ্যে ৩৪ শতাংশের অর্থাৎ প্রতি তিনজনে একজনের অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে৷ তরুণ এবং কর্মক্ষম মানুষের মধ্যেই অভিবাসনের ইতিহাস রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে৷ ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সি মানুষের হিসাবে অভিবাসন ইতিহাস রয়েছে ১৪ শতাংশের৷
গত দশকে জার্মানিতে অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে৷ ২০১৫-২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসনের মধ্যে দিয়ে জার্মানিতে এসেছেন৷ তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী এসেছে ইউক্রেন ও সিরিয়া থেকে৷
জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি ৩১ শতাংশ অভিবাসী এসেছেন শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচি, আশ্রয় এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে৷ কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে এসেছেন ২৩ শতাংশ এবং পারিবারিক পুনর্মিলনের মধ্য দিয়ে এসেছেন ২১ শতাংশ অভিবাসী৷
ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিস ২০২২ সালের আদমশুমারির ফলাফল এবং ২০২৪ সালের আদমশুমারির প্রাথমিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷
তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসীদের আনা ছাড়া জার্মানি তার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
গত বছরের ২৬ নভেম্বর বার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শ্রমবাজারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী ধরে রাখতে হলে ২০৪০ পর্যন্ত প্রতি বছর অন্তত দুই লাখ ৮৮ হাজার অভিবাসী কর্মীর প্রয়োজন হবে জার্মানিতে৷
জার্মানিতে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে৷ এর বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে জার্মান শ্রমবাজারে৷
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, শ্রমঘাটতির প্রভাব বেশ নাটকীয়ভাবে আঘাত করবে দেশটির অর্থনীতিকে৷ এমন অবস্থায় জার্মানি যদি অভিবাসীদের তাদের শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ না দেয়, তাহলে ২০৬০ সালের মধ্যে চাহিদার তুলনায় কর্মী কমবে চার ভাগের এক ভাগ৷
বার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে জার্মানিতে কর্মীর সংখ্যা ১০ শতাংশ কমে যাবে৷ বর্তমানে জার্মানির শ্রমবাজারে যুক্ত আছেন চার কোটি ৬৪ লাখ কর্মী৷ তা কমে হবে চার কোটি ১৯ লাখ৷ এ অবস্থা বজায় থাকলে ২০৬০ সালের মধ্যে শ্রমশক্তি ২৫ শতাংশ কমে হবে তিন কোটি ৫১ লাখ৷
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস