Logo
×

Follow Us

ইউরোপ

ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের নতুন সম্ভাবনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ২৩:৩৮

ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের নতুন সম্ভাবনা

২০২৪ সালের নতুন অভিবাসন আইনের আলোকে ফ্রান্সে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত হওয়ার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। শ্রমিক সংকটে থাকা খাতগুলোতে কর্মরত অভিবাসীরা এখন নির্দিষ্ট শর্তপূরণ সাপেক্ষে এক বছরের রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ফরাসি শ্রম, স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এই খাতগুলোর হালনাগাদ তালিকা রাষ্ট্রীয় জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে গত ২২ মে।

নতুন তালিকায় সর্বমোট ৪১টি পেশা চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ, কৃষি, নির্মাণ, পরিবহন, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ সব পেশা। প্যারিস ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ইল-দ্য-ফ্রঁন্স অঞ্চলে শ্রমিক সংকট সবচেয়ে প্রকট, যেখানে এসব পেশায় বিপুল অনিয়মিত অভিবাসী কর্মরত আছেন। কোনো খাতে নিয়মিত হওয়ার সুযোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাঁধুনি, নার্স, রেস্তোরাঁ কর্মী, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কারিগর, সুপারভাইজার, ওয়েল্ডার, কাঠমিস্ত্রি, গাড়ি ও যন্ত্রপাতি মেরামতকারী, কৃষিশ্রমিক, লজিস্টিক ম্যানেজার এবং আইটি প্রকৌশলীসহ আরো অনেক। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেশা বাদ পড়ায় সমালোচনাও রয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের সংগঠন জিএইচআর হতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছে, রান্নার সহকারী ও ওয়েটারদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া দুঃখজনক। নিয়মিত হওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে:

১. আবেদনকারীকে অন্তত তিন বছর ফ্রান্সে বসবাস করতে হবে।

২. সর্বশেষ দুই বছরে অন্তত এক বছর তালিকাভুক্ত পেশায় কাজ করার প্রমাণ (যেমন পে স্লিপ) থাকতে হবে।

৩. অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকা এবং পুলিশের ক্লিয়ারেন্স থাকতে হবে।

৪. সমাজে একীভূত হওয়া এবং ফরাসি মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

এই প্রক্রিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসীরা এখন থেকে নিয়োগকর্তার সুপারিশ ছাড়াই সরাসরি প্রেফেকচুরে আবেদন করতে পারবেন। আইনটি প্রাথমিকভাবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

ভিন্নমত ও প্রতিবাদ

অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো নতুন তালিকায় খুশি নয়। ‘সিএসপি ৭৫’ প্ল্যাটফর্মের কমোকো সো অভিযোগ করেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত তালিকা থেকে বাদ গেছে। তিনি বলেন, “রাঁধুনি বা গুদামের শ্রমিক সবাই পরিশ্রম করছেন। অথচ কিছু পেশাকে স্বীকৃতি দিয়ে বাকিদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।

অভিযোগ আছে, তালিকাটি মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে তৈরি হওয়ায় শ্রমবাজারের প্রকৃত চাহিদার প্রতিফলন ঘটেনি। এই আইনের ফলে অনেক পেশার অনিয়মিত অভিবাসীরা আইনি নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেন জরুরি এই উদ্যোগ?

ফ্রঁন্স ত্রাবাইয়ের তথ্য মতে, ২০২৫ সালে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে প্রায় ৩ লাখ ৩৬ হাজার কর্মী প্রয়োজন হবে, যার অর্ধেকের বেশি পদে লোক পাওয়া কঠিন হবে। অর্থাৎ ফ্রান্সের অর্থনীতি এখন অভিবাসননির্ভর হয়ে উঠেছে।

শ্রমমন্ত্রী আস্ত্রিদ পানোসিঅঁ-বুভে বলেছেন, ‘এই তালিকা শ্রমবাজারের বাস্তবতা, মানবিক মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে।’

তবে নতুন অভিবাসনমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন, প্রথমে নিয়মিত অবস্থানে থাকা বেকার বিদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে। যেসব পেশা এই তালিকায় নেই, তাদের জন্য ‘সার্কুলার ভালস’ এখনো প্রযোজ্য।

তবে নতুন সার্কুলারে প্রেফেকচুরগুলোর বিবেচনার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের জন্য প্রক্রিয়াটি জটিল হয়ে উঠতে পারে। নতুন অভিবাসন আইন কিছু অনিয়মিত অভিবাসীর জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে ঠিকই, তবে এর বাস্তবায়ন ও তালিকার সীমাবদ্ধতা নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনিয়মিত অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় আরো স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবভিত্তিক নীতি দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যসূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর

Logo