
উত্তর আফ্রিকা থেকে গ্রিসের ক্রিতি দ্বীপ এবং আশপাশের এলাকায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমিত সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার কারণে এই প্রবণতা দ্বীপটির জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রিসের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটি নিউজ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লিবিয়া থেকে আসা ৫৩টি নৌকা ক্রিতিতে পৌঁছেছে।
অনেক নৌকায় শিশুরাও ছিল এবং আগমনের এই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
শুধু গত কয়েক দিনে ক্রিতির দক্ষিণে ৩২৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে হেলেনিক কোস্টগার্ড বা গ্রিক উপকূলরক্ষীরা।
জানা গেছে, এসব নৌকা লিবিয়ার তব্রুক বন্দর থেকে যাত্রা করেছিল। মানব পাচারের অভিযোগে ছয়জন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাসের শুরু পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকা থেকে যাত্রা করে প্রায় দুই হাজার ৮৮১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ক্রিতিতে পৌঁছেছেন।
যাদের বেশিরভাগই মিশর, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক। এছাড়া পাশ্ববর্তী কাসোস দ্বীপেও প্রায় ৪০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন। জানা গেছে, তাদের অনেকেই জার্মানির উদ্দেশ্যে যাত্রা চালিয়ে যেতে চান।
মানব পাচারের নতুন রুট?
ক্রিতি ও এর ছোট প্রতিবেশী দ্বীপ গাভদোস এর আগে এত অভিবাসনের মুখোমুখি হয়নি। এখন এই দ্বীপগুলোতে সীমিত জনসংখ্যা ও অবকাঠামোর কারণে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৪ সালে পুরো বছরজুড়ে যেখানে ৮৬০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছিলেন, সেখানে ২০২৫ সালের প্রথম কয়েক মাসেই সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে।
২০২৫ সালের মার্চে এক স্থানীয় টিভি চ্যানেলে গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী দিমিত্রিস কাইরিদিস বলেন, “সংখ্যা এখনো তুলনামূলকভাবে কম হলেও চলমান প্রবণতা আমাদের চিন্তায় ফেলেছে।”
মাত্র ৬০ জন স্থায়ী বাসিন্দার দ্বীপ গাভদোসে প্রতিদিনই অভিবাসী-ভর্তি নৌকা আসছে। দ্বীপটির মেয়র লিলিয়ান স্তেফানাকি জানিয়েছেন, বর্তমানে সেখানে ৬৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছেন, যাদের ক্রিতিতে স্থানান্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
দ্বীপে কোনো শরণার্থী কেন্দ্র না থাকায় তাদের পরিত্যক্ত ভবনে রাখা হচ্ছে। খাবার এবং মৌলিক সেবার সংকট তীব্র।
ক্রিতিতেও কিছু পরিত্যক্ত শিশু-ক্যাম্পে এখন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রাখা হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর জরুরি সহায়তা পাঠিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ঘুমানোর ব্যাগ ও স্বাস্থ্যসামগ্রী।
সাধারণভাবে লিবিয়া থেকে ছেড়ে আসা নৌকাগুলো ইতালির দিকে যাত্রা করে। কিন্তু এখন সেগুলো সরাসরি গ্রিসে পৌঁছানোয় নতুন রুট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইউএনএইচসিআর গ্রিসের মুখপাত্র স্তেলা নানু বলেন, “এখনকার বেশির ভাগ নৌকাই সরাসরি ক্রিতি ও গাভদোসে আসছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। তবে এটি মানব পাচারের স্থায়ী রুটে পরিণত হয়েছে কিনা, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।”
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস