অভিবাসী ও স্বেচ্ছাসেবীদের অপরাধী বানানোর প্রবণতা বাড়ছে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২২

অভিবাসী অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংস্থা পিআইসিইউএম সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউরোপজুড়ে অভিবাসী এবং তাদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকারকর্মীদের অপরাধীকরণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
চলতি মাসের ২৩ এপ্রিল প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দ্য প্ল্যাটফর্ম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অন আনডকুমেন্টেড মাইগ্রেন্টস (পিআইসিইউএম)।
পিআইসিইউএমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপে অভিবাসন নীতি কঠোর করার ফলে অভিবাসীদের শুধু অনিয়মিতভাবে সীমান্ত অতিক্রমের জন্য নয়, বরং ছোটখাটো সহায়তা দেয়ার জন্যও মানব পাচার বা চোরাচালানের মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে৷
২০২৪ সালে ইতালি, গ্রিস ও স্পেনে অন্তত ৯১ জন অভিবাসীকে চোরাচালান ও অনিয়মিত অভিবাসনে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাদের অধিকাংশই সীমান্ত পারাপারে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, যদিও বাস্তবে অনেকেই শুধু যাত্রী ছিলেন৷
এমনই একজন অভিবাসী মাহতাব সাবেতারা গত বছর ইনফো মাইগ্রেন্টসকে বলেছিলেন, “আমার বাবা গাড়ি চালিয়েছিলেন৷ এর দায়ে তাকে গ্রিসের কোরিডালোস কারাগারে পাঠানো হয়৷ আমি বাবার গ্রেপ্তারের পর অনেক দিন পর্যন্ত তার খোঁজ পাইনি৷ এটি ছিল অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর৷ কারণ আমরা ভেবেছিলাম, তিনি কেবল একটি ক্যাম্পে ছিলেন৷”
পিআইসিইউএম বলছে, অনেক অভিবাসীকে বন্দুকের মুখে জাহাজ চালাতে বাধ্য করা হয়৷ আবার অনেকেই কেবল ফোনের জিপিএস ব্যবহার করে বা আহত ব্যক্তিকে পানি দেয়ার মতো কাজ করলেও তাদের ‘পাচারকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে৷
সহায়তাকারীদের অপরাধীকরণ
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ২০২৪ সালে অন্তত ১৪২ জন এনজিও বা অভিবাসন সংস্থার কর্মীকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ তাদের কেউ পানির বোতল দিয়েছেন, কেউ খাবার কিংবা পোশাক দিয়েছেন৷ এমন সহায়তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷
গ্রিসে অভিযুক্ত এমন একজন এনজিও কর্মী শন বাইন্ডার ইনফো মাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছিলেন, আপনি যদি পানিতে কাউকে দেখতে পান এবং তারা যদি বাঁচার জন্য সাহায্য চান, তখন আপনি কী করবেন?
অনেক মামলার রায় পেতে বছর লেগে যাচ্ছে৷ অভিযুক্তরা তাদের জীবন ও জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন।
আইনজীবীরা বলছেন, এটা একটি নতুন ধরনের বিচারিক হয়রানির কৌশল। যেখানে অভিযোগ দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে অভিবাসী ও সহায়তাকারীদের মানসিকভাবে দুর্বল করা হচ্ছে৷
একজন আইনজীবী ইনফো মাইগ্রেন্টসকে বলেন, “আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন এই আইন বদলাবে৷ তবে সেটা ইউরোপীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷’’
পিআইসিইউএমের মতে, অভিবাসী এবং মানবিক সহায়তাকারীদের অপরাধীকরণের এই প্রক্রিয়া কেবল মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক কৌশল৷ যার উদ্দেশ্য হলো অভিবাসনের পথকে ভয়ভীতির মাধ্যমে রুদ্ধ করা৷
তবে আশার কথা, অনেক মামলায় আদালত অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিয়েছে৷ তবু অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই ধরনের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার হুমকির মুখে পড়ছে৷
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস