মালয়েশিয়া এখন জাপানি শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় উচ্চশিক্ষার গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। সাশ্রয়ী টিউশন ফি, ইংরেজি ভাষাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশের কারণে দেশটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। আগে ব্রিটেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ছিল প্রধান গন্তব্য, কিন্তু ব্যয়বহুল পড়াশোনা ও কঠোর ভিসা নীতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন মালয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন।  

জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরে ১৩৯ জন জাপানি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, যা দুই বছর আগের তুলনায় ৬৬ জন বেশি। এই সংখ্যা কানাডা (১১৮ জন) ও ব্রিটেনের (১০৪ জন) চেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র (৫২০ জন) ও অস্ট্রেলিয়ার (১৫৯ জন) পর মালয়েশিয়া এখন শীর্ষ গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।  

মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্রিটিশ শিক্ষা মডেল অনুসরণ করে এবং প্রধানত ইংরেজিতে পাঠদান করে। বার্ষিক টিউশন ফি ৫ লাখ থেকে ১৮ লাখ ইয়েনের মধ্যে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অর্ধেকেরও কম। জীবনযাত্রার খরচও তুলনামূলকভাবে কম। কুয়ালালামপুরকে ২০২৪ সালের বৈশ্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় সূচকে ২০০তম স্থানে রাখা হয়েছে, যা পশ্চিমা শহরগুলোর তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। চার বছরের স্নাতক কোর্সে মোট খরচ ৪০ লাখ থেকে ৯০ লাখ ইয়েনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা জাপানের অনেক জাতীয় বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায়ও কম।  

শিক্ষার্থীরা শুধু সাশ্রয়ী খরচের জন্য নয়, বরং মালয়েশিয়ার বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্যও আকৃষ্ট হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বৈষম্যের কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশোনা করতে পারছেন। সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এক শিক্ষার্থী জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সহপাঠীদের সঙ্গে বসবাস করে তিনি সহজেই আন্তর্জাতিক পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছেন।  

তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে শক্তিশালী ইংরেজি দক্ষতা প্রয়োজন। অনেক প্রতিষ্ঠান আইইএলটিএস পরীক্ষায় উচ্চ স্কোর দাবি করে। এছাড়া পড়াশোনার চাপ জাপানের তুলনায় বেশি হওয়ায় কিছু শিক্ষার্থী মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়েন। নিরাপত্তার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হয়। জাপানি দূতাবাস শিক্ষার্থীদের রাতে একা চলাফেরা না করার পরামর্শ দিয়েছে।  

সব মিলিয়ে মালয়েশিয়া এখন জাপানি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস্তবসম্মত ও আকর্ষণীয় বিকল্প। সাশ্রয়ী খরচ, আন্তর্জাতিক পরিবেশ এবং ইংরেজি ভাষাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা দেশটিকে উচ্চশিক্ষার নতুন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।