বিশেষ সাক্ষাৎকার
উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ কোনো পথ নেই

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৫

ড. রকিব চৌধুরী; ফ্যাকাল্টি অব এডুকেশন, মনাশ ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯৬ সালে তার শিক্ষকতার যাত্রা শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে। এরপর কেবল বাংলাদেশ নয়; শিক্ষকতা করেছেন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, ব্রুনাই ও সৌদি আরবে। বর্তমানে মেলবোর্নের মনাশে শিক্ষকতা করলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। প্রতি বছর মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সুপারভিশনে পিএইচডি গবেষণায় যুক্ত হন অন্তত ১০ জন নানা দেশের শিক্ষার্থী। এখন পর্যন্ত দেশ-বিদেশের ২১ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তার সুপারভিশনে। ড. রকিব সিনিয়র ফেলো হিসেবেও আছেন যুক্তরাজ্যের হায়ার এডুকেশন একাডেমিতে। তিনি এডিটর ইন চিফ টেসল বাংলাদেশ জার্নালে। টেসল, ল্যাঙ্গুয়েজেস এডুকেশন, স্যোশিওলিঙ্গুইস্টিকস্, আইডেন্টিটি, ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন, বাইলিঙ্গুয়ালিজম, হায়ার এডুকেশন পলিসি, কলোনিয়ালিটি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল থিউরিজ তার শিক্ষকতা ও গবেষণার বিষয়।
অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা, কোন গ্রেডে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনায় আসা উচিত, স্কলারশিপ কীভাবে পাওয়া যায়, পিএইচডির প্রস্তুতি কেমন করে নিতে হবে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ আর সাফল্য ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। ড. রকিব চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব
মাইগ্রেশন কনসার্ন: একটি ব্যাপারে জানতে চাই, অনেক সময় স্টুডেন্টরা বলে তারা স্কলারশিপ পাচ্ছে না, সেটার কী কারণ?
ড. রকিব চৌধুরী: হ্যাঁ, এখানেই আমি বলছি যে আইইএলটিএস, থিসিস, মাস্টার্স লাগবে। এটা হচ্ছে মিনিমাম এলিজিবিলিটি ক্রাইটেরিয়া এবং বাংলাদেশ থেকে যে কোনো স্টুডেন্ট মাস্টার্স শেষ করেছে, কিন্তু পাবলিকেশন নেই, নো প্রবলেম। টিচিং এক্সপেরিয়েন্স নেই নো প্রবলেম। আইইএলটিএসে ৬.৫ পাওয়া বা ৭ পাওয়া বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের জন্য মাস্টার্স পাশ করার পর বিশেষ করে যারা এডুকেশন পড়তে চায়, আমার ফ্যাকাল্টিতে এটা কোনো ব্যাপারই না। মিনিমাম এলিজিবিলিটি ক্রাইটেরিয়া আমি যদি মিট করতে পারি, তাহলে আই উইল বি একসেপটেড ফর পিএইচডি। ওকে এটা হচ্ছে একটা ব্যাপার স্মারক। আরেকটি জিনিস মনে রাখতে হবে, যখন হোয়েন ইটস কাম টু স্কলারশিপ, তখন কিন্তু ওই মিনিমাম দিয়ে হচ্ছে না। তখন হয়ে যাচ্ছে যে ম্যাক্সিমাম।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: ম্যাক্সিমাম এর ব্যাপারটা কী? কোন বিষয়গুলোতে ম্যাক্সিমাম পেতে হবে?
ড. রকিব চৌধুরী: ম্যাক্সিমাম মানে হচ্ছে, মনে করুন ১০০ জন পিএইচডির জন্য অ্যাপ্লাই করল, এর মধ্যে ৯০ জন মিনিমামটা মিট করল। ওদের সবার আইইএলটিএস আছে। সবার থিসিস আছে। সবার এটা সেটা সবই আছে। মিনিমাম টা মিট করল ওকে। ৯০ জন একসেপ্ট করা হলো কিন্তু স্কলারশিপ আছে দশটা। এখন এই ৯০ জন সবাইকে একসেপ্ট করা হয়েছে এবং টাকা দিলে সবাইকে গ্রহণ করা হবে। তারা শুরু করতে পারবে কিন্তু স্কলারশিপ আছে দশটা তাহলে কোন ১০ জন পাবে? ওই ৯০ জনের মধ্যে টপ ১০ জন। তখন কিন্তু ওই মিনিমাম দিয়ে হচ্ছে না, বিকজ মিনিমাম কিন্তু সবাই মিট করেছে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তাহলে ওই ম্যাক্সিমাম লেভেলে স্টুডেন্টদের কোন যোগ্যতাকে বড় করে দেখা হয় স্কলারশিপের জন্য বা পিএইচডির জন্য?
ড. রকিব চৌধুরী: পাবলিকেশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখতে হবে যে আপনার পাবলিকেশন আছে কিনা। এখন পাবলিকেশন আছে মানে এই না যে আমার পাঁচটা-ছয়টা পাবলিকেশন আছে মানে আমি স্কলারশিপ পেয়ে যাবো। ইটস্ নট অ্যাবাউট দ্য নাম্বার, ইটস অ্যাবাউট দ্য কোয়ালিটি অব পাবলিকেশন্স এবং কোয়ালিটি বলতে ডাজেন্ট মিন ইন্টারন্যাশনাল যে কোনো একটা জার্নালের নামের সামনে আমেরিকান লিখা আছে বলেই যে সেটা কোয়ালিটি জার্নাল তা না। তো এগুলোকে বিবলিও মেট্রিক্স বলে। জার্নালের রেঙ্কিং আছে। জার্নালের রেঙ্কিং দুই-তিন ভাবে করা যায়, জার্নালের বিভিন্ন ম্যাট্রিক্স আছে। এই ম্যাট্রিক্স দিয়ে ডিসাইড করা হয় যে জার্নালের রেঙ্কিংটা কি রকম। এটার ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। সাইটেশনের উপর নির্ভর করে। আসলে অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। এখন আমার হয়তো চারটা-পাঁচটা-ছয়টা পাবলিকেশন আছে কিন্তু এগুলো সব ছোটখাটো জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রেঙ্কিং নেই, সাইটেশন নেই, কিছু নেই। এরচেয়ে যদি ভালো জার্নালে একটা আর্টিকেল থাকে দ্যাট উইল মেক দ্য ডিফারেন্স।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তার মানে পাবলিকেশনের সংখ্যা না, মান গুরুত্বপূর্ণ?
ড. রকিব চৌধুরী: সেটাই বলছি। পাবলিকেশনের কোয়ালিটি দরকার, নট কোয়ান্টিটি। দ্যাট উইল টেক ইউ ফ্রম দ্য মিনিমাম টু দ্য ম্যাক্সিমাম। এটা টপ টেনে নিয়ে যাবে আপনাকে। পাবলিকেশন ছাড়া আরো অন্য ব্যাপার আছে। আমি কনফারেন্সে প্রেজেন্ট করেছি, আমার ফান্ডিং পেয়েছি আমি, আমি গবেষণা নিয়ে কাজ করেছি, টিচিং এক্সপেরিয়েন্স সবকিছুই কাউন্ট করে। অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি এগুলো কাউন্ট করে। বাট আমি বলব যে, পিএইচডির জন্য সবচেয়ে বেশি ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে পাবলিকেশন। সো ওই পাবলিকেশনই হচ্ছে ফারাক টা বিটুইন দ্য মিনিমাম অ্যান্ড দ্য ম্যাক্সিমাম। মিনিমামটা মিট করা আসলে খুবই ইজি। এরপর যদি কোন স্টুডেন্ট বিত্তবান পরিবার থেকে আসে তারা মিনিমামটা মিট করে, তারপর তিন-চার বছর পর্যন্ত পরিবারের সহায়তায় পড়ে, সেটা করতে পারে নট এ প্রবলেম। কিন্তু স্কলারশিপে যদি আসতে হয় এবং আমাদের দেশে অধিকাংশ স্টুডেন্ট সম্ভবত নাইন্টি নাইন্টি ফাইভ পার্সেন্ট মানুষ ইনক্লুডিং মাইসেল্ফ স্কলারশিপ না পেলে এখানে এসে পড়তে পারতাম না। সো দ্যাট ওয়াজ এ প্রিভিলেজ যে আমি স্কলারশিপ পেয়েছিলাম।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: স্কলারশিপ পেতে চাইলে কেবল আইইএলটিএসে ভালো নম্বর পেলেই হবে না, খুব ভালো পাবলিকেশন্সও দরকার। তাই তো?
ড. রকিব চৌধুরী: আসলে অনেক বিষয় স্কলারশিপ পাওয়ার সাথে যুক্ত। শুধু আইইএলটিএসে ভালো করলে হবে না, আমার দুইটা-তিনটা-চারটা পাবলিকেশন্স লাগবে এবং এখানে পাবলিকেশন ইটস নট অ্যাবাউট দ্য নাম্বার ইটস অ্যাবাউট দ্য কোয়ালিটি।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তাহলে কয়টা পাবলিকেশন বা কয়টা কোয়ালিটি পাবলিকেশন হলে আমি গ্যারান্টিড যে আমি স্কলারশিপ পাব?
ড. রকিব চৌধুরী: এটার কোনো সহজ ও এক কথায় উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে আপনি যে রাউন্ডে অ্যাপ্লাই করছেন… বছরে দুইটা রাউন্ড আছে… ওই রাউন্ডে আপনার কম্পিটিটর কারা ছিল, কো-অ্যাপ্লিকেন্ট কারা ছিল তাদের ওপর নির্ভর করবে। সো হয়তো আপনার একটা পাবলিকেশনে ওই রাউন্ডে পেয়ে যেতে পারেন বিকজ ইউ আর দ্য স্ট্রঙ্গেস্ট ক্যান্ডিডেট ইন দ্যাট রাউন্ড। আবার এমনও হতে পারে দুইটা পাবলিকেশন বা তিনটা পাবলিকেশনেও হচ্ছে না। সো এটা বলা যায় না নিশ্চিত করে যে আপনি স্কলারশিপ পেয়েই যাবেন। এটা ডিপেন্ড করে আপনি কখন অ্যাপ্লাই করছেন তার ওপর।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: স্যার, আরেকটা কথা যদি কোন স্টুডেন্ট মিনিমামটা মিট করেছে মাস্টার্স বা পিএইচডির স্কলারশিপের জন্য। কিন্তু স্কলারশিপ পাওয়া গেলো না। তাহলে এ্যাডমিশন বা অফার রিজেক্ট করে দেয়া উচিৎ হবে?
ড. রকিব চৌধুরী: আমি মনে করি, আপনার এটা কিন্তু রিজেক্ট করার কোন কারণ নেই। আপনি ইউনিভার্সিটির অফার এক্সেপ্ট করুন। আপনি তো ওই কমেন্টসমেন্ট ডেটটাকে ১২ মাস পর্যন্ত মানে এক বছর পর্যন্ত ডিফার করতে পারবেন।এক্সটেন্ড করতে পারবেন।আপনি বলতে পারেন যে, তোমাদের অফার গ্রহণ করছি কিন্তু আমি স্কলারশিপ পাইনি। বাট আমি মিনিমামটা মিট করেছি। আমি পিএইচডি করতে চাই কিন্তু আমাকে ১২ মাস সময় দিতে হবে। ওই ১২ মাসের ভেতর আপনি সময় পাচ্ছেন, স্কলারশিপের চেষ্টা করতে পারবেন। যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান, তাহলে তো আপনি যে কোনো সময় শুরু করতে পারবেন ১২ মাসের মধ্যে। আর এই ১ বছরের মধ্যে আপনাকে নতুন করে আইইএলটিএস দিতে হবে না, কোন পেপার ওয়ার্ক দিতে হবে না। আপনার ওইটা ভ্যালিড থাকবে ১২ মাস পর্যন্ত। সো আমার এডভাইস হচ্ছে যে স্কলারশিপ যদি নাও থাকে ইফ ইউ আর একসেপ্টেড প্লিজ গো ফর ইট। এইতো।
চলবে…