কাবেরী মৈত্রেয়, নিউ ইয়র্ক থেকে
১৩ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থীর তথ্য খুঁজছে ট্রাম্প প্রশাসন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১১:০৯

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে এমন ১৩ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থীর তথ্য যাচাই করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ২০ জন কর্মকর্তা এই ১৩ লাখ বিদেশি শিক্ষার্থীর নাম কম্পিউটারাইজড ইনডেক্সের মাধ্যমে যাচাই করেন, যেখানে অপরাধমূলক ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত কয়েক মাসে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ছাত্র হঠাৎ করেই তাদের আইনি মর্যাদা হারানোর পর এই প্রথম গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ ব্যাখ্যা দিয়েছে কীভাবে একের পর এক ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ওয়াশিংটনের এক আদালতের শুনানিতে এমনটা জানা গেছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছেন এমন আন্তর্জাতিক ছাত্রদের টার্গেট করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভাগটি জানায়, ১০ থেকে ২০ জন কর্মী ব্যবহার করে ১৩ লাখ বিদেশি ছাত্রের নাম এফবিআই পরিচালিত কম্পিউটারাইজড ইনডেক্স "ন্যাশনাল ক্রাইম ইনফরমেশন সেন্টার"-এর মাধ্যমে যাচাই করে, যেখানে অপরাধমূলক ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য থাকে।
এই প্রক্রিয়ায় ৬ হাজার ৪০০টি হিট আসে। এরপর সেখান থেকে অনেক ছাত্রের রেকর্ড স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম সেভিস এ বাতিল করা হয়, যা অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ ভিজিটরদের তথ্য সংরক্ষণ করে।
শুনানিতে মার্কিন প্রশাসন জানায়, এই উদ্যোগের নাম ছিল স্টুডেন্ট ক্রিমিনাল এলিয়েন ইনিশিয়েটিভ।
এ প্রসঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সহকারী পরিচালক আন্দ্রে ওয়াটসন বলেন, আইন প্রণয়ন সংস্থার কর্মকর্তারা এখানে বিশ্লেষকের ভূমিকায় কাজ করেছেন এবং পুরো প্রক্রিয়াটি, যা রবার্ট হ্যামার তত্ত্বাবধান করতেন, দুই থেকে তিন সপ্তাহে সম্পন্ন হয়।
ওয়াটসন জানান, এসব নাম স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয় এবং প্রায় ৩ হাজার ছাত্রের ভিসা বাতিল করা হয়। এরপর স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডিএইএসকে সেই ছাত্রদের সেভিস রেকর্ড বাতিল করার নির্দেশ দেয়।
ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অ্যাটর্নি এলিজাবেথ ডি. কারলান গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে এক শুনানিতে বলেন, এখন থেকে শুধু ক্রাইম ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্যে ভিত্তি করে আইসিই আর শিক্ষার্থীদের স্ট্যাটাস বাতিল করবে না।
ওয়াটসন বলেন, ডিএইচএস অতীতে নির্দিষ্ট ছাত্রদের নিয়ে এই ধরনের খোঁজ চালিয়েছে, কিন্তু এত বড় পরিসরে কখনো করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসন মার্চ মাসে হাজার হাজার আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসা ও আইনি মর্যাদা বাতিল করা শুরু করে। সমালোচকরা বলছেন, এই বাতিলকরণ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় বা যেমন ডিইউআইর মতো অভিযোগ থাকা ছাত্রদের লক্ষ্য করেই করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে অনেক সপ্তাহ ধরে প্রশ্ন ছিল, সরকার আসলে কীসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ ছাত্রদের প্রায় কোনো নোটিশই দেওয়া হয়নি।
এই তথ্য উন্মোচনে অভিবাসন আইনজীবী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
ইমিগ্রেশন নীতিতে প্রযুক্তি ব্যবহার শুনতে কোনো খারাপ সাই-ফাই সিনেমার মতো মনে হলেও সেটাই এখন বাস্তবতা বলে জানান জাথ শাও, ক্লিভল্যান্ডভিত্তিক এক অভিবাসন আইনজীবী, যিনি এমন অনেক ছাত্রকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এই বিষয়টি সব আমেরিকানের উদ্বিগ্ন করা উচিত, কারণ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত এই প্রযুক্তি যে কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই একদিন ব্যবহৃত হতে পারে।”
শাও বলেন, এই নতুন তথ্য প্রকাশ আশ্চর্যজনক না হলেও এটা প্রক্রিয়াটির নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তার মতে, ১০ জন কর্মী দিয়ে এত ছাত্রের রেকর্ড যাচাই করা সম্ভব নয়। শুধু নাম দিয়ে যাচাই করলে বড় ধরনের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
শাওসহ অনেক আইনজীবী এমন ছাত্রদের নিয়ে কাজ করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ হয়েছে বা মামলা জিতে গেছেন, তাদের কোনো সাজা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিগহ্যাম ইয়াং ইউনিভার্সিটির পিএইচডি ছাত্র সুগুরু ওন্ডার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে মাছ ধরা সংক্রান্ত একটি লঘু অভিযোগ ছিল, যা পরে বাতিল হয়।
তবু কয়েক সপ্তাহ আগে তার আইনি স্ট্যাটাস বাতিল করে দেওয়া হয় এই অভিযোগে যে, তিনি ক্রিমিনাল রেকর্ডে চিহ্নিত এবং তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে। যদিও পরে তার স্ট্যাটাস পুনঃস্থাপন করা হয়।
শাও বলেন, ইমিগ্রেশন প্রসেসে সরকারি ডেটাবেস ব্যবহারের ফলে এমনকি মার্কিন নাগরিকরাও আতঙ্কিত। তারা ভাবেন, এই তথ্য একদিন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে।