Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠছে মানব পাচারের হাতিয়ার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৬

সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠছে মানব পাচারের হাতিয়ার

ফেসবুক, টিকটক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ; এই পরিচিত অ্যাপগুলোর মাধ্যমে এখন তরুণ-তরুণীদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর সিদ্ধান্তটি নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। পাচারকারীরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে এক শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে। ভালোবাসার অভিনয়, বিদেশে চাকরির প্রলোভন কিংবা মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে তরুণদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিদেশে; অধিকাংশ সময়েই অবৈধ পথে। 

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি: প্রেম নয়, এটি প্রযুক্তিনির্ভর প্রলোভনের জাল

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, “অনলাইনে তৈরি হওয়া সম্পর্কের সূত্র ধরে অনেকেই ভুয়া মডেলিং এজেন্সি কিংবা বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির ফাঁদে পড়ে পাচারকারীদের হাত ধরছেন। কিন্তু অধিকাংশই পৌঁছানোর পর বুঝতে পারেন তারা ফাঁদে পড়েছেন।”

বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “পাচারকারীরা এখন আর সরাসরি যোগাযোগে আগ্রহী নয়। মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে পাচারের চেইন গড়ে তুলছে। ভুক্তভোগীরা বুঝতেই পারেন না, কখন সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।”

গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পৌঁছেছেন প্রায় ৬৫ হাজার অভিবাসী, যাদের একটি বড় অংশ পাচারের মাধ্যমে গেছেন।

প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার উন্নত দেশে যেতে গিয়ে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েন।

পাচারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বয়সসীমা ১৫ থেকে ৩০ বছর।

বাস্তব কেস স্টাডি: টিকটকের প্রেমে আটকে পড়ে সীমান্ত পার হন রংপুরের নিশাত

নিশাত (ছদ্মনাম), বয়স ১৮, বাড়ি রংপুরের এক গ্রামে। টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয় এক যুবকের সঙ্গে, যিনি নিজেকে “মডেলিং এজেন্সির প্রতিনিধি” বলে পরিচয় দেন। কয়েক মাস প্রেমের অভিনয়ের পর নিশাতকে প্রস্তাব দেওয়া হয় ভারতে গিয়ে “টিকটক ইনফ্লুয়েন্সার” হওয়ার। পরিবারকে না জানিয়ে সীমান্ত পথে পাড়ি দেন।

ভারতে গিয়ে বুঝতে পারেন, তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এক দালালের কাছে, যিনি জোরপূর্বক যৌনকর্মে বাধ্য করেন। পরে এনজিওর সহায়তায় স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে নিশাতকে উদ্ধার করা হয়, তবে মানসিক ট্রমা থেকে আজও মুক্ত হতে পারেননি।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার উদ্বেগ

জাতিসংঘের ‘মানব পাচার বিরোধী দিবস’-২০২২-এর প্রতিপাদ্য ছিল “প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার”। সংস্থাটি মনে করে, পাচারকারীরা এখন মূলত প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শিকার খুঁজে নিচ্ছে, তাদের নজরদারি করছে এবং অর্থ আদায় করছে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, লিবিয়া, তুরস্ক, গ্রিস; এই পাচারপথ এখন আরো প্রযুক্তিসম্পন্ন ও চ্যালেঞ্জিং।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানব পাচার রোধে প্রয়োজন-

ডিজিটাল সচেতনতা শিক্ষা: স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকেই অনলাইন নিরাপত্তা শেখাতে হবে।

পরিবার ও সমাজের নজরদারি: কিশোর-কিশোরীদের আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে।

কড়া আইন প্রয়োগ ও নজরদারি: প্রযুক্তিনির্ভর পাচার শনাক্তে সাইবার টাস্কফোর্স গঠন জরুরি।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার: পাচার থেকে ফিরে আসা ভুক্তভোগীদের জন্য মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে, তবে সচেতন না হলে সেটিই হয়ে উঠতে পারে সর্বনাশের কারণ। তরুণ সমাজ, অভিভাবক ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া মানব পাচারের মতো অপরাধ ঠেকানো সম্ভব নয়।

আপনি যদি পাচার বা সন্দেহজনক অনলাইন সম্পর্কের শিকার হন, নিচের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন:

📞 ব্র্যাক অভিবাসন সহায়তা: ০৮০০০১০২০৩০ (টোল-ফ্রি)

📞 পুলিশ সাইবার ইউনিট: ৯৯৯

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

Logo