
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে, যা "নিরাপদ দেশ" হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই তালিকা অনুযায়ী, যেসব দেশের নাগরিকরা ইউরোপে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাদের আবেদন ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি, তাদের দেশের নাগরিকদের ইউরোপ থেকে দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে। মিসর ও তিউনিসিয়া এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, ভারত, কসোভো এবং মরক্কোও রয়েছে।
এই তালিকা তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের শরণার্থী প্রক্রিয়াকে দ্রুততর ও আরো কার্যকর করা। ইউরোপের শরণার্থী প্রক্রিয়া এখনো অনেক সময়সাপেক্ষ এবং কিছু দেশ; যেমন মিসর ও তিউনিসিয়া দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বড় পরিবর্তন বা ঝুঁকি না থাকার কারণে তাদের নাগরিকদের আবেদনগুলো সাধারণত ব্যর্থ হয়। এই তালিকার মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে, আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং যারা তালিকাভুক্ত দেশগুলোর নাগরিক, তাদের আবেদন অধিকাংশ সময়ে ব্যর্থ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন; যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, এই পদক্ষেপটি শরণার্থীদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে এবং বিপদাপন্ন গোষ্ঠী, যেমন রাজনৈতিক দমনমূলক শাসনের অধীনে থাকা, এলজিবিটি গোষ্ঠী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে অবিচারের কারণ হতে পারে। তাদের মতে, এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে এমন দেশগুলো নিয়ে, যাদের মধ্যে কিছু রাষ্ট্র রয়েছে, যেগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়েছে। যেমন মিসর ও তিউনিসিয়া।
এমন অনেক উদ্বেগ রয়েছে, শরণার্থী ফিরিয়ে পাঠানোর সময় এই দেশগুলোর নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা হতে পারে। বিশেষত রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মিডিয়া সেন্সরশিপের মতো সমস্যা এসব দেশে প্রকট। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, শরণার্থীরা যদি তাদের দেশে ফিরে যায়, তাদের হয়তো নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হতে হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের জীবনের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
এই প্রস্তাবটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নীতির একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে আসছে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয় প্রক্রিয়া সম্পর্কিত "আশ্রয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা" (Asylum Procedures Regulation) পরিবর্তন করবে। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি নতুন অভিবাসন চুক্তি গ্রহণ করেছে, যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে যে দেশগুলোকে নিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, তাদের নাগরিকদের শরণার্থী আবেদন প্রক্রিয়া সহজতর করা হবে এবং তাদের ফিরিয়ে পাঠানো দ্রুত হবে।
তবে এই প্রস্তাবটি এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হওয়ার জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদন পেতে হবে। এই অনুমোদন পাওয়ার আগে সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই সিদ্ধান্তে নিজেদের মতামত জানাবে এবং সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে মানবাধিকার ও শরণার্থী নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচিত হতে পারে।
এই সিদ্ধান্তটি একটি বড় আন্তর্জাতিক আলোচনার অংশ, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসন নীতির আধুনিকীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করছে। এটি ইউরোপের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের মাঝে একটি সমঝোতার খোঁজ করছে, যেখানে একটি পক্ষ শরণার্থীদের অধিকারে গুরুত্ব দিতে চায় এবং অন্য পক্ষ দ্রুত ও কার্যকরী অভিবাসন ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
এটি ইউরোপীয় দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈদেশিক সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মানবাধিকার সুরক্ষা ও অভিবাসন নীতির মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করতে কাজ করা হবে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স