কোনো নির্দিষ্ট দেশে কাজের জন্য অতিরিক্ত সংখ্যায় শ্রমিক গেলে সেখানে শ্রমিকের সরবরাহ বেড়ে যায়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে মজুরিতে। একপর্যায়ে প্রবাসী শ্রমিকদের গড় আয় কমতে শুরু করে। তাই শুধু স্বল্প দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন খাতে দক্ষ ও বিশেষায়িত শ্রমিক পাঠাতে পারলে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব- এমন মন্তব্য উঠে এসেছে একটি তাত্ত্বিক গবেষণায়।
১১ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার শিরোনাম ছিল, ছোট অর্থনীতির দেশের প্রবাসী আয় ও প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব। গবেষণাটি উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব মোরশেদ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস।
গবেষণায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দ্বৈত প্রভাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে তেল উৎপাদনকারী বা হোস্ট দেশগুলো সরাসরি লাভবান হয়। এসব দেশের জিডিপি ও শ্রম চাহিদা বাড়ে। ফলে স্বল্পমেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের আয় বৃদ্ধি পায়।
তবে গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি চিত্রটি ভিন্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের মতো শ্রম রপ্তানিকারক বা হোম দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। উচ্চ দামে জ্বালানি আমদানির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে, শিল্প খাতে খরচ বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিক ভোগ কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে কর্মসংস্থান ও জীবনমানে।
গবেষণায় আরো বলা হয়, দীর্ঘ মেয়াদে দেশীয় শ্রমিক ও নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশী উভয়ের জীবনমান সংকুচিত হয়। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে অতিরিক্ত শ্রমিক পাঠানো হলে সেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের গড় মজুরি কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
গবেষকরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শ্রমবাজার বৈচিত্র্যকরণ জরুরি। একই দেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন গন্তব্য অনুসন্ধান এবং স্বল্প দক্ষতার পাশাপাশি দক্ষ ও উচ্চমূল্যের পেশাভিত্তিক শ্রমিক পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে একদিকে প্রবাসী শ্রমিকদের আয় টেকসই হবে, অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
logo-1-1740906910.png)