জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির সরাসরি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে নতুন বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদরা।
১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত সেমিনারে বলা হয়, তেলের দাম বাড়লে স্বল্প মেয়াদে জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এতে আয় কমে যায় প্রবাসী শ্রমিকদের। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে রপ্তানিকারক দেশের অর্থনীতিতেও।
‘ছোট অর্থনীতির দেশের রেমিট্যান্স ও প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুব মোরশেদ। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত দুই দশকে বৈশ্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ জিডিপির শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে সেই বছর রেমিট্যান্স-জিডিপি অনুপাত ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা যায়, তেলের দাম বাড়ার পরপরই মধ্যপ্রাচ্যসহ তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে উৎপাদন বাড়ে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রবাসী শ্রমিকের মজুরি বাড়ে এবং অতিরিক্ত কাজের সুযোগ তৈরি হয়। রেমিট্যান্সও দ্রুত বাড়ে। তবে এই সুবিধা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। উচ্চ মজুরির সুযোগ দেখে নতুন শ্রমিক দ্রুত বিদেশমুখী হয়। এতে শ্রমের জোগান বেড়ে গিয়ে গড় মজুরি কমতে থাকে। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে ওঠানামা দেখা যায়।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন পুরোনো প্রবাসী শ্রমিকরা, যাদের আয় নতুন শ্রমিক প্রবেশের চাপে কমে যায়। অন্যদিকে রপ্তানিকারক দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে চাপ বাড়ে। উচ্চমূল্যের জ্বালানি আমদানির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়, শিল্পে ব্যয় বাড়ে, ভোগ কমে এবং কর্মসংস্থানের সংকট গভীর হয়। গবেষকরা বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ছে মানেই অর্থনীতি ভালো আছে এই ধারণা বিভ্রান্তিকর।
ড. মোরশেদ আরো বলেন, তেল উত্তোলনকারী দেশের জিডিপি ও শ্রম চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশসহ শ্রম রপ্তানিকারক দেশে দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ও কল্যাণ সংকুচিত হয়। এতে বিদ্যমান শ্রমিক এবং নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশী দু’পক্ষের জীবনমানেই চাপ পড়ে।
সেমিনারে কয়েকটি নীতিগত সুপারিশ তুলে ধরা হয়। দেশে শ্রমিকের আয়ের ওপর কর কমানো, উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করা এবং অভিবাসনকে আরো নিয়মমাফিক ও নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর মধ্যে আনা। এতে বিদেশে শ্রম সরবরাহ কিছুটা কমবে এবং প্রবাসী মজুরি স্থিতিশীল থাকবে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
শেষ বিচারে, শুধু রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব নয় বলে জানান ড. মোরশেদ। তার মতে, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে শ্রম উৎপাদনশীলতা বাড়ানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ।
logo-1-1740906910.png)