ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ ভাঙা, কাটা কিংবা ভেতরের জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার অভিযোগ থামছেই না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে দাবি করছে, এ ধরনের ঘটনা এখন আর শাহজালালে ঘটে না। কিন্তু দেশে-বিদেশে যাতায়াতকারী বহু যাত্রী প্রায়ই ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এসব অভিযোগ নিয়মিত দেখা যায়। ফলে বিমানবন্দরের লাগেজ নিরাপত্তা নিয়ে আস্থাহীনতা বাড়ছে।
রিয়াদ-ঢাকা ফ্লাইটের এক যাত্রী মিজানুর রহমান (ছদ্মনাম) জানান, ঢাকায় বেল্ট থেকে ব্যাগ তুলেই দেখেন চেইন খোলা। বাড়িতে গিয়ে দেখেন দুটি পারফিউম, একটি মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ও কিছু পোশাক নেই। তার অভিযোগ, রিয়াদে ব্যাগ জমা দেওয়ার সময় সব ঠিক থাকলেও ঢাকায় এসে ব্যাগের অবস্থা বদলে যায়। অভিযোগ জানাতে গেলে এয়ারলাইন্স ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দুই পক্ষই একে-অপরের ওপর দায় চাপায়।
মিলান-ঢাকা ফ্লাইটের আরেক যাত্রী সায়মা হোসেন (ছদ্মনাম) জানালেন, তার ব্যাগের একটি অংশ কাটা ছিল। মূল্যবান পণ্য না গেলেও ব্যাগটি ব্যবহারযোগ্য ছিল না। তিনি বলেন, অভিযোগ করলে সমাধান পাওয়া যায় না- এ ধারণা থেকেই অনেক যাত্রী আর ঝামেলায় যেতে চান না। একইভাবে মালয়েশিয়া ফেরত আরেক যাত্রী অভিযোগ করেন, বেল্টে ব্যাগে টেপ লাগানো অবস্থায় পান। পরে দেখেন চেইন কাটা, আর নেই একটি মোবাইল পাওয়ারব্যাংক।
অভিযোগ জানাতে গিয়ে যাত্রীরা সাধারণত তিন পক্ষের মাঝে আটকে পড়েন। এয়ারলাইন্স বলে, ব্যাগ হ্যান্ডলিং এজেন্সির দায়িত্ব; হ্যান্ডলিং এজেন্টরা দাবি করেন, বিমানের ভেতরেই ব্যাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; আর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, লাগেজের দায় এয়ারলাইন্সের। ফলে ছোটখাটো ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ নিয়ে যাত্রীরা বহু সময়েই কোনো স্পষ্ট সমাধান পান না।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, লাগেজ ব্যবস্থাপনায় এখন আধুনিক মনিটরিং কার্যকর আছে, সিসিটিভির নজরদারি শক্তিশালী, আর লাগেজ চুরি-সংক্রান্ত অভিযোগ এখন খুবই কম। তবে যাত্রীরা প্রশ্ন তোলেন, সিসিটিভি থাকলে তদন্ত প্রতিবেদন বা দায় নির্ধারণের ফল কেন প্রকাশ পায় না? কেন অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া এত জটিল?
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, লাগেজ চুরি বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দায়িত্ব-অস্পষ্টতা, নজরদারির ঘাটতি ও তদন্তের স্বচ্ছতার অভাবেই যাত্রীদের আস্থা ফেরে না। তাদের পরামর্শ, লাগেজ লোড-আনলোড এলাকা একক সংস্থার অধীনে আনা, সিসিটিভি ফুটেজ যাত্রী চাইলে দেখার সুযোগ দেওয়া এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণই এই সংকট কমাতে পারে।
শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার। এখানে যাত্রী লাগেজ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির বিষয় নয়, এটি দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত।
logo-1-1740906910.png)