Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

নেপাল হয়ে কানাডা-ইতালির স্বপ্ন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:০১

নেপাল হয়ে কানাডা-ইতালির স্বপ্ন

কানাডায় উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে মানব পাচারকারী চক্র। নতুন কৌশলে তারা বাংলাদেশ থেকে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে নেপালে, যা এখন মানব পাচারের তৃতীয় রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে কানাডা পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের আটকে রেখে নির্যাতন ও টাকা আদায়ের অভিযোগ বাড়ছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, ইতালি ও কানাডায় পাঠানোর নাম করে আলজেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপালসহ একাধিক নতুন রুট সক্রিয় করেছে পাচারকারীরা। শনাক্ত করা হয়েছে অন্তত ৩৫টি চক্র। এখন টিভি এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সিলেটের তিন যুবকের মতো আরো অনেকেই এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গত অক্টোবরে দালাল চক্র প্রথমে তাদের নিয়ে যায় নেপালে। সেখানে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে চক্রটি ছিনিয়ে নেয় তাদের পাসপোর্ট। এরপর বন্দুক ঠেকিয়ে মারধর, আটকে রেখে নির্যাতন এবং পরিবার থেকে টাকা আদায়ের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের। এম এ মান্না ও হাফিজুর রহমান জানান, “মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলত। দেশে ফেরার আশা পর্যন্ত ছিল না।”

দালালদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে নেপাল, সেখান থেকে হংকং হয়ে কানাডা। ‘১২ লাখ টাকার প্যাকেজ’। নেপালে গেলে নাকি পাসপোর্টে লাগবে কানাডার ভিসা। শুরুতে ৫ লাখ, বাকি ৭ লাখ নাকি কানাডায় গিয়ে কাজ করে পরিশোধ করা যাবে। আবার যেতে না পারলে নেপাল ভ্রমণের খরচও ‘ফ্রি’- এমন প্রলোভনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ভয়ংকর প্রতারণা ও মানব পাচার।

নেপাল আগে থেকেই ছিল পূর্ব ইউরোপগামী বাংলাদেশিদের বায়োমেট্রিক দেওয়ার স্থান। সেই সুযোগকেই এখন পূর্ণাঙ্গ পাচার রুটে রূপ দিয়েছে দালাল চক্র। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা এ এস এম সাদেক বলেন, “কানাডা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নেপালে এনে টাকা আত্মসাৎ ও নির্যাতনের অভিযোগ এবারই প্রথম এভাবে সামনে এলো।”

সিআইডি জানায়, মানব পাচারের ১৫০টি মামলার তদন্ত চলছে। শনাক্ত করা হয়েছে ৩৫টি চক্র এবং নেপাল রুটে জড়িত মিজানুর নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। সিআইডির এসএসপি মোহাম্মাদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, “নেপাল রুট হয়ে কেউ কানাডায় যায় না। নেপালে নেওয়া মানেই সে কানাডায় যাচ্ছে না, এটি বুঝতে হবে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মানব পাচার সংক্রান্ত পুলিশি তদন্তাধীন ও বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪ হাজার ৬৪৩টি। এসব মামলার আসামি ৪২ হাজারের বেশি; গ্রেফতার হয়েছে ১৬ হাজার ৯৩১ জন। গত তিন বছরে চলমান বিচার শেষে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে ১১ জনের, বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত আরো ১৪৮ জন।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালে কর্মী চাহিদা থাকায় সেখানকার কিছু রিক্রুটিং এজেন্ট ও বাংলাদেশের দালালরা মিলে ‘উইন-উইন ব্যবসা’ গড়ে তুলেছে। এমনকি বাংলাদেশিদের নেপালের পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর ঘটনাও পাচ্ছেন তারা। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন শিকদারের মতে, “দুই দেশের দালালদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পাসপোর্ট হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাই মূল সমস্যা”।

বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সচেতনতা বাড়াতে গ্রাম পর্যায়ে ওয়ান-টু-ওয়ান ক্যাম্পেইন প্রয়োজন। ভুক্তভোগীরাই যেন অন্যদের সচেতন করতে ভূমিকা রাখে।”

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যুবসমাজের কর্মসংস্থান তৈরি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রবাসীদের মাধ্যমে সচেতনতা ক্যাম্পেইন জোরদার করা গেলে মানব পাচারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

Logo