সাইবার ফাঁদে পড়ে দুর্বিষহ প্রবাসগামী নারীর জীবন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৬
বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে প্রান্তিক পরিবার থেকে বহু নারী অভিবাসনের স্বপ্ন দেখেন। বিদেশে গিয়ে ভালো চাকরি, আর্থিক স্বচ্ছলতা ও পরিবারের জন্য উন্নত জীবন গড়ার আশায় তারা দালাল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তথাকথিত “সহযোগীদের” প্রলোভনে পড়েন। কিন্তু বাস্তবে তাদের অনেকের জীবনই পরিণত হয় ভয়াবহ প্রতারণা ও মানব পাচারের শিকার হয়ে।
সম্প্রতি ঝিনাইদহের সালেহা বেগমের ঘটনা আলোচনায় এসেছে। ফেসবুকে এক নারীর বিলাসী জীবন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি কাতারে চাকরির উদ্দেশে যাত্রা করেন। দালালের নির্দেশে পরিবার থেকে ধার করে টাকা পাঠান। কিন্তু বিদেশে পৌঁছেই প্রতিশ্রুত চাকরি না পেয়ে তালাবদ্ধ ঘরে বন্দি হন। কয়েক মাস ধরে তাকে নির্যাতন, ধর্ষণ ও একাধিকবার অন্য দালালের কাছে বিক্রি করা হয়। পরিবার থেকে আরো টাকা আদায় করা হয়। অবশেষে সুযোগ বুঝে পালিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফেরেন।
এমন অভিজ্ঞতা শুধু সালেহার নয়। বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য নারী অভিবাসী কর্মী একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের অনেককে গৃহকর্মী বা কম্পিউটার অপারেটরের চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়, কিন্তু বাস্তবে যৌন ব্যবসায় বা অমানবিক শ্রমে ঠেলে দেওয়া হয়। পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়, পালানোর সুযোগ থাকে না।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক, টিকটক বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চাকরির প্রলোভন, বিদেশে ভালো জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি কিংবা বন্ধুত্বের মাধ্যমে নারীদের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। পরে তাদের জোরপূর্বক যৌন ব্যবসা, অমানবিক শ্রম বা অন্য অপরাধমূলক কাজে ঠেলে দেওয়া হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান আইন যেমন মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত মানব পাচার মোকাবিলায় যথেষ্ট কার্যকর নয়। আইনের সীমাবদ্ধতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং ডিজিটাল ফরেনসিক সক্ষমতার ঘাটতি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাচারকারীরা অনলাইনে ভুয়া বিজ্ঞাপন, ভুয়া চাকরির অফার ও ভিডিও কলে প্রতারণার মাধ্যমে আস্থা অর্জন করে। অনেক সময় পরিবার থেকেও অর্থ আদায় করা হয়। ভুক্তভোগীরা বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন বা জব্দ হয়ে যায়, ফলে তারা আর দেশে ফিরতে পারেন না।
নীতিগত সুপারিশে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের জন্য পুনর্বাসন ও কাউন্সেলিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে নারীরা প্রতারণার ফাঁদে না পড়েন। একই সঙ্গে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সালেহার মতো অনেক নারী এখন সমাজে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। তারা অন্যদের সতর্ক করছেন সাইবার প্রতারণা ও দালালদের ফাঁদ সম্পর্কে। একই সঙ্গে তারা প্রমাণ করছেন, প্রতিকূলতার মধ্যেও নতুন করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার শক্তি আছে।
logo-1-1740906910.png)