রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় আবারো ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১৪ মিনিটে এ কম্পন অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ভূমিকম্পটি হালকা মাত্রার ছিল। সকাল ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুরে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।
গত নভেম্বর মাসে এক সপ্তাহে ছয়বার কম্পন অনুভূত হওয়ায় মানুষের উদ্বেগ আরো বেড়ে যায়। অনেকেই গুগলে খুঁজতে থাকেন ‘আজ কি ভূমিকম্প হয়েছে’। অথচ বাংলাদেশের কাছেই রয়েছে এমন এক দেশ, যেখানে ভূমিকম্প প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা, দেশটি হলো জাপান। সেখানে বছরে প্রায় দেড় হাজার ভূমিকম্প হয়, সুনামির সতর্কতাও দেওয়া হয় নিয়মিত।
জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’-এ অবস্থিত। ইউরেশিয়ান, ফিলিপাইন ও প্যাসিফিক টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে অবস্থান করায় দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলের একটি। ফলে ছোট-বড় ভূমিকম্প সেখানে নিয়মিত ঘটে। অনেক ছোট কম্পন মানুষ টেরই পায় না, মাঝারি ভূমিকম্প স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। তবে বড় ভূমিকম্পও দেশটিকে বহুবার কাঁপিয়েছে।
বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগে প্রস্তুতি থাকলেও ভূমিকম্পে তেমন সচেতনতা নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাপানের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ অনেক কিছু শিখতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ূন আখতার বলেন, জাপানে মানুষ ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয় না, কারণ তারা সচেতন ও প্রস্তুত। স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, জাপানে শিশুরা জন্মের পর থেকেই ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রশিক্ষণ পায়। স্কুলে নিয়মিত মহড়া হয়- ডেস্কের নিচে আশ্রয় নেওয়া, নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া ইত্যাদি। প্রায় ১৫ দিন পরপর এসব অনুশীলন হয়।
জাপানে আশ্রয়কেন্দ্র কোথায় আছে তা সবাই জানে। পার্ক বা খেলার মাঠে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশেও বড় শহরে এমন নিরাপদ জায়গা নিশ্চিত করা জরুরি।
অবকাঠামোগত নিরাপত্তায় জাপান অনেক এগিয়ে। উঁচু ভবনগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়, যাতে ভূমিকম্পে ধসে না পড়ে, বরং দুলে থাকে। বাংলাদেশে বড় ভবনগুলোতে বিল্ডিং কোড মানা হলেও ছোট ব্যক্তিগত ভবনে তা মানা হয় না, যা ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানা ও পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা কার্যকর করা জরুরি।
জাপানের ভবনগুলো স্থিতিস্থাপক। প্রকৌশলীরা ভবনকে এমনভাবে নকশা করেন, যাতে ছোট ভূমিকম্পে কোনো ক্ষতি না হয় এবং বড় ভূমিকম্পে প্রাণহানি এড়ানো যায়। এ জন্য ভবনের নিচে শক অ্যাবজরবার বসানো হয়। কখনো রাবারের ব্লক ব্যবহার করা হয়, আবার মোশন ড্যাম্পার ও মেশ স্ট্রাকচারও কাজে লাগে। এসব প্রযুক্তি ভবনকে নড়াচড়া শুষে নিতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় এসব প্রযুক্তি হয়তো সব ভবনে প্রয়োগ সম্ভব নয়। তবে সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত মহড়া, নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ এবং বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানা; এসব বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশও প্রস্তুত হতে পারবে।
logo-1-1740906910.png)