Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের শীর্ষে বাংলাদেশিরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩০

বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের শীর্ষে বাংলাদেশিরা

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তবে আবেদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যানের হারও বেড়েছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলে আশ্রয়ের আবেদন বাড়ে। এর সঙ্গে তরুণদের বেকারত্বও একটি বড় কারণ। আবার অনেক আবেদন মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হওয়ায় প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থীরা বিপদে পড়ছেন। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।  

যুক্তরাজ্যে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৫১ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। পাকিস্তান, ইরিত্রিয়া, ইরান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন। যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মোট আবেদনকারীর ৩৯ শতাংশই এই পাঁচ দেশের নাগরিক। ২০০৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ২২ থেকে ৪৬ হাজার আবেদন জমা পড়লেও ২০২১ সালের পর থেকে আবেদন দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা আবেদনকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। এদের অনেকেই আগে ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করে পরে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।  

ইউরোপে আশ্রয় আবেদনকারীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনে বাংলাদেশিদের ২ হাজার ৭৩৫টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে ইউরোপে বাংলাদেশিদের আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার সবচেয়ে বেশি, ৯৬ শতাংশ। ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি প্রথমবার আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। কিন্তু সফলতার হার মাত্র ৪ শতাংশ। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। ফ্রান্স, ইতালি ও গ্রিস আবেদন নিষ্পত্তির গতি বাড়িয়েছে, ফলে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনাও বাড়ছে।  

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিদেশে আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালে ২৮ হাজার ৪৭৩ জন বাংলাদেশি শরণার্থী হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। একই বছরে ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন দেশে তারা নিবন্ধিত হয়েছেন। এমনকি আফ্রিকার সোমালিয়াতেও কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। 

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে আশ্রয়ের আবেদন বাড়ে। ইউরোপে মানবাধিকারভিত্তিক সুযোগ থাকায় অনেকে তা ব্যবহার করে, আবার কেউ কেউ অপব্যবহারও করে। তার মতে, দেশে চাকরির সুযোগ কম থাকায় তরুণরা বিদেশমুখী হচ্ছে। অনেকেই পড়াশোনা বা স্কলারশিপের নিশ্চয়তা না পেয়ে অন্যভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে। স্টুডেন্ট ভিসা শেষ হলে কেউ কেউ আশ্রয়ের আবেদন করে, কিন্তু প্রমাণ না থাকায় বেশিরভাগ আবেদনই প্রত্যাখ্যাত হয়।  

ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন সবসময় রাজনৈতিক কারণে নয়। অনেকেই অনিয়মিত পথে বিদেশে গিয়ে আশ্রয়ের আবেদন করেন। তাদের আবেদন প্রায়ই ভুয়া হিসেবে ধরা হয়। ফলে প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থীরা সমস্যায় পড়েন। তার মতে, ইউরোপ বা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক আশ্রয় অনুমোদনের হার এক শতাংশেরও কম।    

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে আশ্রয় আবেদন বাড়ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক চাপ ও অনিয়মিত অভিবাসনের কারণে। তবে মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া আবেদন প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়লে বিদেশে আশ্রয় চাওয়ার প্রবণতা কমতে পারে।

Logo