Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

দেশের শেফ প্রশিক্ষণ: তরুণদের বিদেশে কাজের নতুন দিগন্ত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৬

দেশের শেফ প্রশিক্ষণ: তরুণদের বিদেশে কাজের নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশে শেফ কোর্স এখন শুধু শখ নয়, বরং অভিবাসনের একটি কার্যকর পথ হয়ে উঠছে। প্রতি বছর সারাদেশে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন কালিনারি প্রোগ্রাম থেকে স্নাতক হন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী মালয়েশিয়া, দুবাই, কাতার ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ নিয়ে প্রকাশ করেছে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।

সরকারি পর্যায়ে ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এনএইচটিটিআই) প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে বেকারি, ফুড প্রোডাকশন, ফ্রন্ট অফিস ও হাউসকিপিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এর মধ্যে প্রায় ৬০০ জন বিশেষভাবে রন্ধনশিল্পে যুক্ত হন। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কালিনারি আর্টস, শেফ’স টেবিল একাডেমি, খলিল কালিনারি আর্টস সেন্টার ও চট্টগ্রামের আইসিআর ইনস্টিটিউট অব কালিনারি অ্যান্ড রিসার্চের মতো প্রতিষ্ঠান, যেখানে আন্তর্জাতিক মানের ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালিত হচ্ছে।  

লন্ডনে পড়াশোনা করা সাদিক নিশাতের অভিজ্ঞতা এর উদাহরণ। দেশ ছাড়ার আগে তিনি খলিল কালিনারি আর্টস সেন্টারে তিন মাসের কোর্স করেন। রান্না, বেকিং ও পরিচ্ছন্নতার প্রশিক্ষণ তাকে লন্ডনে পড়াশোনার পাশাপাশি রেস্টুরেন্টে কাজের সুযোগ দিয়েছে। তার মতো শত শত তরুণ বুঝতে পারছেন, রন্ধনশিল্পের পেশাদার প্রশিক্ষণই আন্তর্জাতিক চাকরির বাজারে প্রবেশের চাবিকাঠি।  

বাংলাদেশি-আমেরিকান উদ্যোক্তা খলিলুর রহমান দেশে ফিরে নতুন প্রজন্মের শেফ তৈরিতে মন দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস ও এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স জনপ্রিয়। কোর্স শেষে শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের ইবি-৩ ভিসা বা জি-১ ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান।  

এনএইচটিটিআইয়ের ট্রেনার মইনুল ইসলাম বলেন, আগে শিক্ষার্থীরা মূলত দেশের বাজারে কাজের লক্ষ্য নিয়ে আসতেন। এখন প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বিদেশে দক্ষ শেফ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন। বিটিইবি স্বীকৃত দুই বছরের ডিপ্লোমা শেষে শিক্ষার্থীরা বিএমইটি বা আন্তর্জাতিক হোটেল চেইনের মাধ্যমে বিদেশে চাকরির আবেদন করতে পারেন।  

২৩ বছর বয়সী মেহনাজ রহমানের অভিজ্ঞতা প্রশিক্ষণের আরেকটি দিক তুলে ধরে। দুবাইয়ে ইন্টার্নশিপ শেষে দেশে ফিরে তিনি ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেছেন। তার মতে, সবাই বিদেশে যায় না, এই প্রশিক্ষণ স্থানীয় পর্যায়েও উদ্যোক্তা তৈরি করছে।  

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির তথ্যমতে, আতিথেয়তা খাতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ কর্মরত, যাদের বড় অংশই প্রশিক্ষিত শেফ। ২০২৩ সালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘শেফ’ ও ‘বেকার’ পদকে দক্ষ অভিবাসনের নতুন বিভাগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা স্বীকৃত সনদ দেখিয়ে বিদেশে চাকরির আবেদন করতে পারছেন।  

তবে কিছু কাঠামোগত সমস্যা রয়ে গেছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সনদ বিদেশে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশিক্ষণের খরচও বড় বাধা, দীর্ঘমেয়াদি ডিপ্লোমার ফি ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা, যা অনেকের নাগালের বাইরে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৃত্তি ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সংকট কাটানো সম্ভব।  

বাংলাদেশে শেফ প্রশিক্ষণ তরুণদের জন্য অভিবাসনের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সঠিক পাঠ্যক্রম, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বীকৃতি এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে রন্ধনশিল্প দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় অবদান রাখতে পারবে। 

Logo