Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

সম্পত্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগে নতুন নিয়ম; বিপাকে প্রবাসীরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৮

সম্পত্তির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগে নতুন নিয়ম; বিপাকে প্রবাসীরা

বাংলাদেশে বসবাস না করেও দেশের সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করতে পারতেন প্রবাসীরা। তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনায় সেই সুযোগ এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, বিদেশে অবস্থানরত কেউ যদি জমি রেজিস্ট্রি করতে চান, তাহলে তাকে দেশে এসে সরাসরি রেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে। বিকল্প হিসেবে দূতাবাসে দেওয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (পিএ) আর গ্রহণযোগ্য হবে না। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, আগে তারা দূতাবাসে গিয়ে পিএ দিয়ে আত্মীয় বা প্রতিনিধির মাধ্যমে জমি কেনাবেচা বা হস্তান্তর করতে পারতেন। এখন সেই সুযোগ বন্ধ হওয়ায় বিদেশে থাকা লাখো বাংলাদেশির জন্য সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, দূতাবাসে দেওয়া পিএ-এর মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা বেড়ে গেছে। অনেক সময় দেখা গেছে, ভুয়া কাগজপত্র বা জাল পিএ ব্যবহার করে জমি দখল বা বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রতারণা ঠেকাতেই নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে প্রবাসীরা বলছেন, এই নিয়ম বাস্তবায়ন হলে তাদের জন্য দেশে থাকা সম্পত্তি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ বা আমেরিকায় থাকা প্রবাসীরা বছরে একবারও দেশে আসতে পারেন না অনেক সময়। ফলে তাদের পক্ষে দেশে এসে জমি রেজিস্ট্রি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে প্রবাসীদের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি বড় প্রভাব পড়বে:

- জমি কেনাবেচা বা হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়বে, কারণ প্রবাসীরা সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

- সম্পত্তি রক্ষায় ঝুঁকি বাড়বে, কারণ তারা আইনগতভাবে কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারছেন না।

- জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ বাড়তে পারে, কারণ প্রবাসীরা দূর থেকে আইনগত হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

- প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে, যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ঢাকাস্থ একাধিক আইনজীবী বলছেন, এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। কারণ, একজন নাগরিকের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের অধিকার থাকা উচিত, তা তিনি দেশে থাকুন বা বিদেশে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। প্রবাসীদের সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরির দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

এদিকে, প্রবাসী সংগঠনগুলো বলছে, দূতাবাসে দেওয়া পিএ-এর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদার করলেই প্রতারণা রোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল ভেরিফিকেশন চালু করা যেতে পারে।

সার্বিকভাবে, নতুন এই নিয়ম প্রবাসীদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। তারা আশা করছেন, সরকার দ্রুত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং একটি বাস্তবসম্মত সমাধান দেবে, যাতে প্রবাসীরা তাদের সম্পত্তি নিরাপদে ও সহজে পরিচালনা করতে পারেন। 

Logo