সংকুচিত শ্রমবাজার ও তলানিতে বাংলাদেশি পাসপোর্টের মান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩১
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে বিদেশে শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে, পাশাপাশি বাংলাদেশি পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও তলানিতে ঠেকেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত ও ভ্রমণপ্রত্যাশী প্রায় কোটি বাংলাদেশি নাগরিক পড়েছেন চরম বিপাকে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলা সংবাদমাধ্যম ঠিকানা এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশে গেছেন ৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৪ জন কর্মী, যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ৭.৫% ও ১৭.৮৫% কম। যদিও গত বছরের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে।
সৌদি আরব ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ওমান; এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো বর্তমানে বন্ধ। সৌদি আরবেও ‘তাকামুল’ সনদ, আকামা, চাকরি ও বেতন-সংক্রান্ত নানা জটিলতায় কর্মীরা ভুগছেন। গত বছর পর্যন্ত বন্ধ থাকা ৯টি শ্রমবাজারের একটিও এখনো চালু হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার জাপানে এক লাখ কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। গত ৯ মাসে মাত্র ৯৬২ জন কর্মী জাপানে গেছেন। ৬২টি রিক্রুটিং এজেন্সি চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একজন কর্মীও পাঠাতে পারেনি। মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম ধাপে ৮ হাজার জনকে বাছাই করা হলেও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ২০২৫ সালের বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে ১০৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম, যা উত্তর কোরিয়ার সমপর্যায়ে। এক বছর আগেও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ৪২টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারতেন, বর্তমানে তা কমে ৩৮টিতে দাঁড়িয়েছে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও উজবেকিস্তানসহ একাধিক দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশে গিয়ে আইন না মানা, ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে অবস্থান এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশিদের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা কমেছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুর্বলতাও যুক্ত হয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকরা বলছেন, শ্রমবাজার রক্ষা ও সম্প্রসারণে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা ও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। নতুন বাজার খোলা এবং পুরনো বাজার পুনরায় চালু করতে প্রধান উপদেষ্টার সক্রিয় হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় জনশক্তি রপ্তানি খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
logo-1-1740906910.png)