Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

স্বপ্নভঙ্গের প্রান্তে প্রবাসীরা: একে একে বন্ধ শ্রমবাজার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৮

স্বপ্নভঙ্গের প্রান্তে প্রবাসীরা: একে একে বন্ধ শ্রমবাজার

বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে এক গভীর অস্থিরতা বিরাজ করছে। সৌদি আরব ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ওমান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের বেশি সময়েও এই বাজারগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সৌদি আরবেও নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে, যা শ্রমিক পাঠানোর হারকে ক্রমাগত নিচে নামিয়ে আনছে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৪ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। যদিও ২০২২ ও ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় এটি যথাক্রমে ৭.৫% ও ১৭.৮৫% কম। তবে ২০২৪ সালের তুলনায় ১৬.৩৯% বেশি কর্মী গেছেন। এই পরিসংখ্যান শ্রমবাজার সংকোচনের ইঙ্গিত দেয়।

অভিবাসনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ অভিবাসন, মানব পাচার, দক্ষতার অভাব এবং আইন লঙ্ঘনের কারণে সৌদি আরবেও কর্মসংস্থান কমছে। গত বছর পর্যন্ত বন্ধ হওয়া ৯টি শ্রমবাজারের একটিও এখনো চালু হয়নি। ফলে জনশক্তি রপ্তানি খাতে ধস নামার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, “শ্রমবাজার রক্ষা করতে হলে দ্রুত গবেষণা করে নতুন বাজার খোলা এবং পুরনো বাজার পুনরায় চালু করতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।”

সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলেও সেখানে কর্মীদের ‘তাকামুল’ নামে দক্ষতা যাচাইয়ের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় অংশ নিতে কর্মীদের ৫০ ডলার ব্যয়সহ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে সাধারণ কর্মীদের জন্য ভোগান্তি বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এই পরীক্ষা শুধু দক্ষ কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হোক।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমানসহ বেশ কয়েকটি শ্রমবাজার গত সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার একাধিকবার বৈঠক করলেও কোনো বাজার চালু করতে পারেনি। দূতাবাস না থাকায় ইউরোপের শ্রমবাজারেও সমস্যা কাটছে না।

জাপানে পাঁচ বছরে এক লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে গঠিত ‘জাপান সেল’ কার্যত অচল। গত ৯ মাসে মাত্র ৯৬২ জন কর্মী গেছেন। ৬২টি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রথম ছয় মাসে একজনও কর্মী পাঠাতে পারেনি। ফলে মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

গত বছর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম ধাপে ৮ হাজার জনকে বাছাই করা হয়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, কারণ নিয়োগদাতা এখনো চাহিদাপত্র পাঠায়নি।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে অভিবাসন খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের ওপর। গবেষণা, কূটনৈতিক তৎপরতা এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার না হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

Logo