বিদেশে কর্মী পাঠানো কমছে, সংকটে বাংলাদেশের শ্রমবাজার
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৫
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ওমান- এই তিনটি দেশে কর্মী পাঠানো বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের বেশি সময়েও এসব বাজার পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি। সৌদি আরবেও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার ক্রমেই কমছে। দৈনিক কালের কণ্ঠ এ নিয়ে প্রকাশ করেছে এক বিশেষ প্রতিবেদন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৪ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় এটি যথাক্রমে ৭.৫% ও ১৭.৮৫% কম। তবে ২০২৪ সালের তুলনায় এ বছর ১৬.৩৯% বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন।
অভিবাসনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ অভিবাসন, মানব পাচার, দক্ষতার অভাব এবং আইন লঙ্ঘনের কারণে বিদেশি নিয়োগদাতারা বাংলাদেশের কর্মীদের নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ছেন। গত বছর পর্যন্ত বন্ধ হওয়া ৯টি শ্রমবাজারের একটিও এখনো চালু হয়নি। ফলে জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা দ্রুত গবেষণা করে নতুন বাজার খোলা এবং পুরনো বাজার পুনরায় চালুর জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সৌদি আরব, যেখানে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৯৭ জন কর্মী গেছেন, সেখানেও সমস্যা বাড়ছে। এখন সব পেশার কর্মীদের ‘তাকামুল’ নামে দক্ষতা পরীক্ষায় পাস করে সনদ নিতে হচ্ছে, যার জন্য প্রতিজনের খরচ প্রায় ৬ হাজার ১০০ টাকা। এই পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রক্রিয়া কর্মীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, শুধু দক্ষ কর্মীদের জন্য এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ওমানের শ্রমবাজার গত সরকারের সময়েই বন্ধ হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকার একাধিক বৈঠক করলেও এখনো কোনো বাজার চালু করতে পারেনি। ইউরোপের বাজারেও দূতাবাস না থাকায় সমস্যা কাটছে না।
জাপানে কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে ‘জাপান সেল’ গঠন করা হলেও গত ৯ মাসে মাত্র ৯৬২ জন কর্মী সেখানে গেছেন। ৬২টি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রথম ছয় মাসে একজন কর্মীও পাঠাতে পারেনি, যার ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রথম ধাপে ৮ হাজারকে বাছাই করা হয়েছে। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, কারণ নিয়োগদাতা এখনো চাহিদাপত্র পাঠায়নি। বোয়েসেল সূত্রে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ, সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ফ্লাইটসহ পুরো প্রক্রিয়া সময়মতো শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে অভিবাসন খাতকে রক্ষা করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
logo-1-1740906910.png)