প্রবাসীদের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, প্রধান কারণ হৃদরোগ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪১
বাংলাদেশে প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগ; বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক এই মৃত্যুর প্রধান কারণ। মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার অভাব, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং অতিরিক্ত শ্রমের কারণে প্রবাসীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক কালবেলা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ হাজার ৮১৩ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠানো হয়েছে। শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই গত এক বছরে ৭০৪ জনের মরদেহ এসেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে ফিরেছে ৩ হাজার ৩৭৫ জন রেমিট্যান্স যোদ্ধার লাশ, প্রতি মাসে গড়ে ৪০০ জনের বেশি।
চট্টগ্রামের রাউজানের আব্দুল হামিদ আবুধাবিতে হৃদরোগে মারা যান। আইনি জটিলতা ও পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ার হতাশা তার মৃত্যুর পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তার বন্ধু। অন্যদিকে, যশোরের মেয়ে মোমেনা দুবাইয়ে হৃদরোগে মারা যান, কিন্তু পরিবারের পক্ষে লাশ দেশে আনতে না পারায় তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়।
কল্যাণ বোর্ডের হিসাব বলছে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৫৭ হাজার ২১৬ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাঠানো মৃতদের মধ্যে ৫৬৪ জন হৃদরোগে, ৪৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায়, ১৯ জন কর্মস্থলে দুর্ঘটনায়, ৩২ জন আত্মহত্যায় এবং ৬১ জন অন্যান্য কারণে মারা গেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ অভিবাসন ব্যয় ও ঋণের চাপ প্রবাসীদের অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। দিনে ১২-১৮ ঘণ্টা কাজের ফলে ঘুমের অভাব ও মানসিক চাপ বাড়ে, যা স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবুধাবিতে রাইসুল নামে এক তরুণ প্রেমঘটিত টানাপোড়েনে আত্মহত্যা করেন, যা মানসিক চাপের ভয়াবহ দিক তুলে ধরে।
আবুধাবি প্রবাসী চিকিৎসক ডা. রোকসানা আক্তার বলেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরিমিত খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, ধূমপান ও অতিরিক্ত চা-পানের অভ্যাস ত্যাগ এবং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। তিনি মনে করেন, প্রবাসে থেকেও নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াই পরিবারের প্রতি সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
রামরুর এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ খাতে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা তীব্র তাপের মধ্যে কাজ করেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এতে কিডনি, মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
সরকারিভাবে এখনো প্রবাসীদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। অথচ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় বৃহত্তম চালিকাশক্তি। প্রবাসীরা আশা করেন, সরকার কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
logo-1-1740906910.png)