২০২৪ সালের আগস্ট থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রদান কার্যক্রমে অঘোষিতভাবে কঠোরতা আরোপ করেছে। এর ফলে শ্রম, পর্যটন ও ট্রানজিট ভিসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশি শ্রমিক, পর্যটক, ব্যবসায়ী এমনকি সরকারি প্রতিনিধিদের ওপরও। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ কংগ্রেসে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আবুধাবি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা জটিলতায় শেষ মুহূর্তে বিদেশ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে তারা যাত্রা করতে সক্ষম হন। একইভাবে, ফরেক্স এক্সপো দুবাইয়ে অংশ নিতে চাওয়া অনেক বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এমনকি জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় সৌম্য সরকারও ভিসা না পাওয়ায় একটি সিরিজে অংশ নিতে পারেননি।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কিছু প্রতিবাদ ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ইউএই এই ভিসা সীমাবদ্ধতা শুরু করে। যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। বাস্তবতা বলছে, কম দক্ষ শ্রমিকদের ভিসা কার্যত বন্ধ। বাংলাদেশ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৮ হাজার শ্রমিক ইউএইতে গেছেন, যেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ হাজার।
পর্যটন খাতেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ট্যুর অপারেটররা বলছেন, আগে বছরে হাজার হাজার ইউএই ভিসা প্রক্রিয়াজাত করা হতো, এখন তা প্রায় শূন্য। বিমান সংস্থাগুলোও যাত্রী সংকটে পড়েছে। ইউএইভিত্তিক এমিরেটসের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, তাদের ৮০% যাত্রীই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য দুবাইকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু ট্রানজিট ভিসা সীমিত হওয়ায় এই প্রবাহও বাধাগ্রস্ত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউএই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছে। তবে সিদ্ধান্তটি ইউএই সরকারের নীতিগত বিষয় হওয়ায় অগ্রগতি ধীর। ইউএই দূতাবাসও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে- এমন গুজব ছড়ালেও বাংলাদেশ দূতাবাস তা অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, ইউএই কর্তৃপক্ষ এমন কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, ভিসা কার্যক্রম প্রায় স্থবির।
এই সংকটের পেছনে রয়েছে ভিসা জালিয়াতি, ভিসা লঙ্ঘন ও অনিয়মিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভিযোগ। ইউএই কর্তৃপক্ষের মতে, দেশটিতে বসবাসরত ভিসা লঙ্ঘনকারীদের মধ্যে ২৫% বাংলাদেশি। বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সমস্যার মূল উৎস বাংলাদেশের নিয়োগ পর্যায়ে, যেখানে দুর্নীতি ও অনানুষ্ঠানিক শ্রম নেটওয়ার্ক শ্রমিকদের শোষণ করছে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।
এই ভিসা সংকট শুধু শ্রমবাজার নয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়, পর্যটন, ব্যবসা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দ্রুত সমাধান না হলে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব আরো গভীর হতে পারে।
logo-1-1740906910.png)