Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

স্বপ্ন আর ঋণের ফাঁদে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৫

স্বপ্ন আর ঋণের ফাঁদে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা

মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ঋণ, কম বেতন ও উচ্চ পারমিট খরচের জালে আটকা পড়েছেন। অথচ তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্য ডেইলি স্টার এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছে। 

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরিফুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে পৌঁছে কাজ পেতে সময় লাগে আরো দুই মাস। এখন তিনি মাসে প্রায় ৫৭ হাজার টাকা আয় করেন, যার মধ্যে ৩৪ হাজার টাকা দেশে পাঠান। কিন্তু এখনো সেই ঋণ শোধ করতে পারেননি। তার মতো অনেকেই দালালের প্রতিশ্রুতিতে বিদেশে গিয়ে বাস্তবে পড়েন কঠিন পরিস্থিতিতে; কম বেতন, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, গাদাগাদি করে থাকা।

কমলগঞ্জের সিয়াম ৩.৬ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভিসা জটিলতায় খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৫.৭ লাখে। কাজ পেতে অপেক্ষা করতে হয় ছয় সপ্তাহ। এখন মাসে ৪৫-৫০ হাজার টাকা পাঠালেও তিনি বলেন, “৬০% শ্রমিকই কষ্টে আছে, বিশেষ করে যারা ফ্রি ভিসায় এসেছে বা দালালের প্রতারণায় পড়েছে।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “উচ্চ নিয়োগ খরচ, কম বেতন ও বার্ষিক পারমিট নবায়নের খরচ (২,৫০০-৩,২০০ রিংগিত) শ্রমিকদের জন্য বড় বোঝা।” অনেকেই ১০% মাসিক সুদে অনানুষ্ঠানিক ঋণ নিতে বাধ্য হন।

২০২৪ সালের মে মাসে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ স্থগিত করে। কারণ ছিল অতিরিক্ত নিয়োগ খরচ, শ্রমিকের অতিরিক্ত সরবরাহ এবং ১০১টি এজেন্সির সিন্ডিকেট। জাতিসংঘের এক চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার ডলার পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে, যেখানে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ফি ৭২০ ডলার।

তবে সব গল্প হতাশার নয়। টাঙ্গাইলের আয়ুব আলী সাত বছর আগে ৪.৫ লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় যান। এখন তিনি মাসে ৮৬ হাজার টাকা আয় করেন এবং ৫৭-৬৩ হাজার টাকা দেশে পাঠান। ফরিদপুরের মনিরুল ইসলাম সরকারি কোম্পানিতে কাজ করে মাসে ৬৩-৭৫ হাজার টাকা আয় করেন। তারা বলেন, সঠিক প্রক্রিয়ায় গেলে ভালো আয় ও নিরাপত্তা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার মোসাম্মাত শাহানারা মনিকা বলেন, “উচ্চ খরচ, প্রতারণা ও শ্রমিক নির্যাতন এখনো বড় সমস্যা।” তিনি নিরাপদ অভিবাসন প্রচারণা, কনস্যুলার সেবা ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ এখন মালয়েশিয়ার বিদেশি শ্রমশক্তির ৪০% সরবরাহ করে, যার সংখ্যা আনুমানিক ৮ লাখ থেকে ১৫ লাখ। গড় আয় ৪৩ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা হলেও গড় অভিবাসন খরচ ৪.৫-৬ লাখ টাকা, যা অনেককে বছরের পর বছর ঋণে ডুবিয়ে রাখে।

সরকারি উদ্যোগে জিটুজি চুক্তি, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ও হুন্ডি প্রতিরোধে ২.৫% রেমিট্যান্স প্রণোদনা চালু রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু রেমিট্যান্স নয়, শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

Logo