যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরতে হবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১১
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের স্বপ্নে বিভোর হাজারো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে এইচ-১বি ভিসায় নতুন ফি আরোপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, দক্ষ কর্মী ভিসা পেতে এখন থেকে ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে, যা স্পন্সর করবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই বিদেশি কর্মী নিয়োগে অনিচ্ছুক হতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ওপিটি (Optional Practical Training) ভিসায়। তার বার্ষিক আয় ৮০ হাজার ডলার হলেও কোম্পানিকে ১ লাখ ডলার অতিরিক্ত ফি দিয়ে তাকে এইচ-১বি ভিসায় রাখতে হবে। তিনি আশঙ্কা করছেন, এত ব্যয়ভার বহন না করে প্রতিষ্ঠানটি হয়তো মার্কিন নাগরিককে নিয়োগ দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট তাহমিদ জামান (ছদ্মনাম) বর্তমানে চাকরি খুঁজছেন ওপিটি পিরিয়ডে। তিনি জানান, আগে যেসব কোম্পানি বিদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহী ছিল, এখন তারা মার্কিন নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফলে তার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা শেষে তিন বছরের জন্য ওপিটি ভিসায় কাজ করার সুযোগ থাকে। এরপর কোম্পানি চাইলে কর্মীকে এইচ-১বি ভিসায় রূপান্তর করে স্থায়ীভাবে রাখতে পারে। কিন্তু নতুন ফি আরোপে সেই পথ এখন কঠিন হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী গেলেও তাদের বড় অংশই তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া অন্যান্য খাতে কাজ করেন, যেখানে গড় বেতন ১ লাখ ডলারের নিচে। ফলে কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ফি দিয়ে তাদের নিয়োগে আগ্রহ হারাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত এক বাংলাদেশি শিক্ষক জানান, তার বার্ষিক আয় ৯০ হাজার ডলার হলেও ভিসা ফি দিতে না পারলে তাকে দেশে ফিরতে হতে পারে। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এত টাকা দিয়ে আমাকে রাখবে না।”
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৯৯ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬% বেশি। গত এক দশকে এই সংখ্যা ২৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার’-এর প্রেসিডেন্ট ড. শিব্বির আহমদ বলেন, “এটি ট্রাম্প প্রশাসনের স্থানীয়দের জন্য চাকরি সংরক্ষণের নীতি।” তিনি জানান, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারণত এফ-১ ভিসা থেকে ওপিটি, তারপর এইচ-১বি ভিসায় রূপান্তরিত হন। কিন্তু নতুন ফি তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তি খাতে উচ্চ বেতনের কর্মীরা হয়তো এই বাধা অতিক্রম করতে পারবেন, কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েটদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকার স্বপ্ন এখন অনিশ্চিত।
তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা
logo-1-1740906910.png)