
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ আইন অনুযায়ী ৫৩ বছর ধরে থাকলেও কোনো নির্বাচনে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো সামাজিক মাধ্যমে প্রচার শুরু করেছে।
তবে প্রবাসীদের একটি অংশ বলছেন, এই প্রক্রিয়াটি এখনো সহজ নয়। নিবন্ধন, যাচাই-বাছাই, ব্যালট পাঠানো ও ফেরত পাঠানো; প্রতিটি ধাপেই রয়েছে চ্যালেঞ্জ। ইসি বলছে, তারা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণই এ উদ্যোগ সফল করবে এবং এটি গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করবে।” ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ইসি জানিয়েছে, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোরে পাওয়া যাবে। অ্যাপে থাকবে নির্দেশনামূলক ভিডিও। নিবন্ধনের সময় দিতে হবে এনআইডি, পাসপোর্ট তথ্য ও প্রবাসের ঠিকানা। ফেস আইডেন্টিফিকেশন ও লাইভনেস ডিটেকশন সম্পন্ন করে রেজিস্ট্রেশন শেষ হলে প্রবাসীর ঠিকানায় ব্যালট পেপার ও ফেরত খাম পাঠানো হবে। ভোট দিয়ে খামে পুরে তা ডাকযোগে ফেরত পাঠাতে হবে।
বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বাস করছেন। এর মধ্যে ৭৯ লাখ মধ্যপ্রাচ্যে, ১৮ লাখ ইউরোপে, ১৩ লাখ ৮২ হাজার উত্তর আমেরিকায়, ১৭ লাখ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এবং অন্যান্য অঞ্চলে কয়েক লাখ।
১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ডাকযোগে ভোটের অধিকার থাকলেও তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৮ সালে বিষয়টি আলোচনায় এলেও কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি। সম্প্রতি আয়োজিত সংলাপে অনলাইন ও প্রক্সি ভোট বাদ দিয়ে ব্যালট পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর অ্যাপটি চালু হবে। প্রবাসীদের ‘এনরোলমেন্ট প্রসেস’ ও ‘ভোটিং প্রসেস’ অনুসরণ করতে হবে। তবে অনেকেই প্রক্রিয়াটি জটিল বলে মন্তব্য করেছেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “ব্যালট পৌঁছানো ও ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা বড় চ্যালেঞ্জ। আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ভোট বাতিল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।”
বিশ্বব্যাপী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের হার মাত্র ২.৭ শতাংশ এবং ভোট সংগ্রহের হার ৩০ শতাংশের নিচে।
তবুও দীর্ঘদিনের বঞ্চনার পর প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের উদ্যোগকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলি বলেন, “ব্যালট সময়মতো পৌঁছালে বিপুলসংখ্যক ভোট সংগ্রহ সম্ভব।” রাজনৈতিক নেতারাও আশাবাদী, যদিও প্রক্রিয়াটি সহজ করার দাবি তুলেছেন।
সবশেষে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “এই উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা ও সততার ওপর।”
তথ্যসূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর