Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩০

প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান অপরিসীম

প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন যেন এক নীরব ত্যাগের গল্প। পরিবারের জন্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে তারা বিদেশের অচেনা পরিবেশে ঘাম ঝরিয়ে পাঠান রেমিট্যান্স। অথচ তাদের কষ্ট, নিঃসঙ্গতা, চোখের জল; সবই থেকে যায় অদৃশ্য। কেউ বোঝে না, কেউ অনুভব করে না।

ভিনদেশে জীবিকার সন্ধানে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ে জমিজমা, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বহু শ্রমিক। কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন সমুদ্রপথে, জঙ্গলে, কিংবা অমানবিক পরিবেশে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৩ বাংলাদেশি শ্রমিক সমুদ্রপথে প্রাণ হারিয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। এই স্বপ্নভঙ্গের দায় কেউ নেয়নি।

তবুও তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ২০২৪ সালে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬.৯ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ১২ শতাংশ। এই অর্থ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি ব্যয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং গ্রামীণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। রেমিট্যান্সের টাকায় গ্রামের মাটির ঘর পাকা হয়েছে, কৃষক জমি কিনেছেন, সন্তানরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক অভিবাসন শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। বর্তমানে প্রায় ১.৫ কোটি প্রবাসী শ্রমিক কর্মরত, যাদের মধ্যে ২০-২৫ লাখ নারী। প্রতি বছর ৮-১০ লাখ নতুন শ্রমিক বিদেশে যান। কিন্তু পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও তাদের জীবন এখনো অনিরাপদ। ২০২২ সালে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিকের মরদেহ দেশে ফিরেছে। অধিকাংশ মৃত্যু হৃদরোগ, স্ট্রোক, দুর্ঘটনা ও অমানবিক কর্মপরিবেশে।

নারী শ্রমিকদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। প্রতি বছর ৫-৭ হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হন। ২০২২-২৩ সালে ১২-১৫ হাজার নারী নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। অতিরিক্ত কাজ, মারধর, যৌন নির্যাতন, পাসপোর্ট জব্দ; সবই তাদের বাস্তবতা। আইনি সহায়তা, সেফ হাউস, পুনর্বাসন ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

রাষ্ট্রীয় দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশন অনেক সময় দায়সারা দায়িত্ব পালন করে। দেশে ফিরে শ্রমিকরা সম্মানজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পুনর্বাসন প্রকল্প, দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।

এই বাস্তবতায় প্রয়োজন প্রযুক্তিনির্ভর সুরক্ষা ব্যবস্থা; যেমন- স্মার্ট অ্যাপ, ডিজিটাল আইডি, রেমিট্যান্স ট্র্যাকিং, নিরাপত্তা অ্যালার্ট। বাধ্যতামূলক চুক্তি, জীবনবীমা, পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা, নারী শ্রমিকদের জন্য কাউন্সেলিং ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাদের সুরক্ষা, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। অন্যথায়, ইতিহাস একদিন এই অবহেলার কঠিন জবাব চাইবে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর

Logo