
অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও উন্নত জীবনমানের আশায় প্রতিদিনই হাজারো বাংলাদেশি পাড়ি জমাচ্ছেন প্রবাসে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৩৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন, যার মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ৩০ লাখের বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি সচল থাকলেও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনের বাস্তব সংকট নিয়ে আলোচনা হয় খুব কম।
সম্প্রতি প্রবাসে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আত্মহননের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। যার মধ্যে রয়েছে বৈবাহিক অশান্তি, ঋণের চাপ এবং নারী কর্মীদের জন্য কাজের অনিরাপদ পরিবেশ।
বহু প্রবাসী পুরুষ স্ত্রী-সন্তানকে দেশে রেখে বছরের পর বছর বিদেশে থাকেন। ভিসা বা আকামা না থাকায় দেশে ফিরতে না পারার কারণে পারিবারিক সম্পর্ক ভেঙে যায়, দেখা দেয় পরকীয়া ও মানসিক অস্থিরতা। এসব কারণে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
অন্যদিকে, উচ্চ সুদে ঋণ করে বিদেশে যাওয়া প্রবাসীরা সেই ঋণ শোধে ব্যর্থ হলে পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়, যা আবার প্রবাসীর ওপর ফিরে আসে। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেন।
নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরো জটিল। মধ্যপ্রাচ্যে বাসাবাড়িতে কাজের ভিসায় যাওয়া নারীরা প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। নির্ধারিত কাজের সময় নেই, বেতন অনিয়মিত; এমনকি দালালদের মাধ্যমে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে। এসব পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ না পেয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেন।
এই সংকট মোকাবিলায় সরকারকে নিতে হবে প্রবাসীবান্ধব উদ্যোগ। চালু করা যেতে পারে একটি ‘প্রবাসী সহায়তা অ্যাপ’, যেখানে প্রবাসীরা সমস্যার কথা জানাতে পারবেন এবং দূতাবাস তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দক্ষতা অনুযায়ী ভিসা প্রদান এবং প্রবাসযাত্রার ব্যয় কমানোও জরুরি।
প্রবাসে আত্মহত্যা করা অনেকের পরিবার মনে করে, তারা হত্যার শিকার হয়েছেন। লাশে জখমের দাগ থাকলে দেশে ফেরার পর পোস্টমর্টেম করা উচিত। প্রবাসী বাঁচলে বাড়বে রেমিট্যান্স, আর রেমিট্যান্স বাড়লে এগোবে বাংলাদেশ।
তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো