Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

বিদেশে নারী অভিবাসনে ধস

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:৫০

বিদেশে নারী অভিবাসনে ধস

বিদেশে কর্মসংস্থানের আশায় প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী পাড়ি জমান সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, জর্ডান ও লেবাননের মতো দেশে। অধিকাংশই কাজ করেন গৃহকর্মী বা গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে। এক দশক আগেও প্রতি বছর এক লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে যেতেন, কিন্তু এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাব, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং চিকিৎসা ও ছুটির সুযোগ না থাকায় এই শ্রমবাজার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ নারী কর্মী বিদেশে যান। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০ হাজার ৮৮ জন। গত কয়েক বছরে এই পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।

প্রবাসে নারী কর্মীদের বাস্তবতা ভয়াবহ। ওকাপের গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসা ৯৪ শতাংশ নারী কর্মী নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির শিকার, ৯৭ শতাংশ চিকিৎসা সুবিধা পাননি, ৮০ শতাংশ পর্যাপ্ত খাবার পাননি এবং ৮২ শতাংশকে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। অধিকাংশের কোনো চুক্তিপত্র ছিল না।

শারমিন সুলতানা ও তসলিমা হারুনের মতো বহু নারী কর্মী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। ব্র্যাকের তথ্যমতে, গত ছয় বছরে শতাধিক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নারীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে ৪১২ নারী অভিবাসী কর্মীর মরদেহ দেশে ফিরেছে, যার মধ্যে ৮৪ জন আত্মহত্যা করেছেন।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, “দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সরকারের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। দৃষ্টান্তমূলক আইনের প্রয়োগ ও নিয়োগকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি জানান, সৌদি আরবে নারী কর্মীরা গৃহকর্মে গিয়ে বাসার স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন, যা তাদের মানসিক ট্রমায় ফেলছে।

রামরুর নির্বাহী পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, “নতুন শ্রমবাজার খোঁজার চেষ্টা না থাকায় নারী অভিবাসন কমছে। ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো গৃহকর্মী বাদ দিয়ে অন্য পেশায় নারী কর্মী পাঠাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে সেই উদ্যোগ নেই।”

নারী অভিবাসন কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা এবং রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা। রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধির আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে এই নারীদের দুঃখগাথা। অথচ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে। এখন সময় এসেছে, নারী অভিবাসীদের সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে এই প্রবৃদ্ধিকে মানবিক ভিত্তিতে টেকসই করার।

তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা 

Logo