
কক্সবাজার উপকূল হয়ে নৌপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার ফের উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। পাচারকারীরা সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে জোরপূর্বক ট্রলারে তুলে দিচ্ছে, বাদ যাচ্ছে না নারী ও শিশুরাও। উদ্দেশ্য মালয়েশিয়ায় পৌঁছে জিম্মি করে স্বজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়।
শীত মৌসুমের আগেই উখিয়া, টেকনাফ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারকারী চক্র। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় গোপন আস্তানায় লোকজনকে জড়ো করে সুযোগ বুঝে ট্রলারে তুলে দেওয়া হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে বিজিবি, র্যাব ও কোস্ট গার্ডের অভিযানে ১৮৭ জনকে উদ্ধার ও ১৬ জন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই নৌপথে মানব পাচার ২০১২-১৪ সালে ভয়াবহ রূপ নেয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ পাচারের শিকার হন, যার মধ্যে তিন শতাধিকের মৃত্যু ঘটে অনাহার, নির্যাতন ও পানিশূন্যতায়।
ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদের অভিজ্ঞতা আরো ভয়াবহ। বন্ধুর প্রতারণায় তিনি পাচারকারীদের হাতে বিক্রি হন। তিন দিন পর ৬০ জনের একটি দলকে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। পরে তার পরিবারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করে দালালরা।
মানব পাচার প্রক্রিয়ায় আটটি ধাপে হাত বদল হয়- তথ্যদাতা, রোড মাস্টার, জমাদার, নৌট্রিপ ও ট্রলার পার্টি। বাংলাদেশে পাঁচ ধাপ এবং থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় তিন ধাপে পাচার সম্পন্ন হয়। প্রতিটি ধাপে টাকা আদায় ও নির্যাতনের শিকার হন ভুক্তভোগীরা।
বর্তমানে পাচারকারীদের প্রধান লক্ষ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। উন্নত জীবনের প্রলোভনে তারা দালালদের ফাঁদে পড়ছেন। ক্যাম্পে অন্তত ৫০টির বেশি দালালচক্র সক্রিয়, যারা সাধারণ রোহিঙ্গা সেজে ক্যাম্প থেকে লোকজনকে পাচার করে।
রোহিঙ্গা নারীদেরও ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে স্বামীর কাছে পৌঁছানোর নামে। এসব যাত্রায় প্রায়ই ঘটে নৌ দুর্ঘটনা। ২০২২ ও ২০২০ সালে দুটি ট্রলারডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, “এভাবে মানুষকে সাগরে পাঠানো অমানবিক। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে শীত মৌসুমে বিপর্যয় ঘটবে।”
প্রশাসন জানিয়েছে, মানব পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বিজিবি ও পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়ে পাচারচক্রের তৎপরতা রুখে দিয়েছে। টেকনাফ থানার ওসি বলেন, “মানব পাচারকারীরা রেহাই পাবে না, পুলিশ বদ্ধপরিকর।”
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ