
অর্থ পাচার, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি ও আমদানি-রপ্তানির নামে অর্থ অপচয়ের কারণে গত কয়েক বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন সংকটময় সময়ে দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০.৩২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ।
আগের অর্থবছর ২০২৩-২৪-এ রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.৮০ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ২৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে এই প্রবাহ প্রমাণ করে, প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
নতুন অর্থবছরের শুরুটাও হয়েছে আশাব্যঞ্জক। শুধু জুলাই মাসেই এসেছে ২.৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। আগস্টের প্রথম ২৩ দিনে এসেছে ১.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি মুদ্রাবাজারেও স্বস্তি এনেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্সের কারণে ডলারের ওপর চাপ কমেছে, যা আমদানি খরচ ও মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
বিশ্ব অর্থনীতির দ্রুত পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রেমিট্যান্স একটি অপরিহার্য শক্তি। বাংলাদেশের কোটি কোটি প্রবাসী শ্রমিক তাদের ঘামঝরা আয় পাঠিয়ে শুধু পরিবার নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের প্রভাব দৃশ্যমান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় এর অবদান অনস্বীকার্য।
সরকারের হুন্ডিবিরোধী অভিযান, মানি লন্ডারিং রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে অবৈধ চ্যানেল সংকুচিত হয়েছে। ফলে প্রবাসীরা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলকেই বেশি নিরাপদ ও লাভজনক মনে করছেন। প্রণোদনা যুক্ত হওয়ায় এই প্রবণতা আরো বেড়েছে।
শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, দক্ষতা উন্নয়ন, ভাষাশিক্ষা ও চুক্তিনির্ভর কর্মী প্রেরণের ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ও মান দুই-ই বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থায় সংস্কার, যেমন প্রবাসী অ্যাকাউন্টে লেনদেন সুবিধা ও রেমিট্যান্সভিত্তিক সঞ্চয় প্রকল্প চালু করায় মানুষ বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছে।
রেমিট্যান্সের ফলে ডলারের জোগান সুষ্ঠু হওয়ায় ব্যাংকগুলো শিল্প ও ওষুধ খাতে এলসি খুলতে পারছে, যা উৎপাদন ও সেবা খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরেছে। তাই রেমিট্যান্স শুধু অর্থ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম ভিত্তি।
তথ্যসূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর