সাইফুল ইসলাম তালুকদার, আরব আমিরাত থেকে
নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দিতে পারা নিয়ে সংশয়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪৮

পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নির্বাচনে ভোট দিতে পারার বিষয়টি দীর্ঘ প্রত্যাশিত হলেও তাদের ভোটের আওতায় আনা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে এ নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনা কম হয়নি। গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আবারো এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রবাসীরা যাতে জাতীয় নির্বাচন ভোট দিতে পারেন, তা নিয়ে নানামুখী কাজ চলছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালট ভোটিং পদ্ধতি অকার্যকর বলে মনে হয়েছে তাদের কাছে। এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দুটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে ১) তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা সূচক পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা; ২) অনলাইন ইন্টারনেট ভোটিং ব্যবস্থা। এই দুটি পদ্ধতির পাশাপাশি প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতিকেও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, ১৭ আগস্ট বিডিনিউজ ২৪.কমের এক খবরে জানানো হয়েছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি এরই মধ্যে পোস্টাল ব্যালটের প্রাথমিক কর্মপদ্ধতি সেরে ফেলেছেন। আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে প্রচারণায় নামতে চায় ইসি।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরকার বা নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রবাসীদের ভোটদানের বিষয়টি নিয়ে প্রবল ইচ্ছার প্রতিফলন থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত মো. তারেক আহমেদ জানালেন, ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে দেশে সাধারণ নির্বাচন হলেও সেই নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন এটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আবুধাবিতে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সরকার খুব সিনসিয়ার প্রবাসীদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে। আমাদের কাছ থেকে, আমাদের শুধু না আরে বেশ কয়েকটা দেশে সম্ভবত চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা এটা কীভাবে করতে পারি, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানাতে পারব, এটা আমার কীভাবে প্রসিড করব। ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশন, এখন ছয় মাসেরও কম সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে এটি করা যাবে এ ব্যাপারে আমি আপনাদের আশা দিতে পারছি না।’
প্রবাসীদের ভোট দিতে পারার বিষয়টি নিয়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো পুরোদমে কাজ করছে জানিয়ে রাষ্টদূত আরো বলেন, বিশ্বের যে দেশগুলোতে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রচলন আছে, সেই দেশগুলোর নিয়ম-কানুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রবাসীদের ভোটের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে ৩০০ সংসদীয় আসনের ব্যালট স্থাপন করতে হবে দূতাবাসে। বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকটা জটিল বলে মনে করেন তিনি। মো. তারেক আহমেদ বলেন, ’আমাদের জন্য কাজটা খুব একটা সহজ না। আমাদের ৩০০টা কনস্টিটিউন্সি। আমিরাতের অনেক বড় জনগোষ্ঠী এখানে থাকে প্রায় ১২ লক্ষ প্রবাসী। আমি ধারণা করি, ৩০০টি সংসদীয় আসনের ভোটারই আমিরাতে থাকে। তাহলে আমার ৩০০টা বুথ লাগবে। ৩০০ টা আসন থেকে ব্যালট আনতে হবে। ৩০০ জন অফিসার আমাকে এখানে রাখতে হবে। কঠিন কাজ। এটা শুধু আরব আমিরাতের জন্য না, সব জায়গাতেই; যেখাবে বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী সবখানে একই চিত্র।’
তবে ক্ষেত্র প্রস্তুত হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া পরবর্তী যে কোনো নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন বলে আশাবাদী আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. তারেক আহমেদ। যদিও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারার অপেক্ষার অবসান চান প্রবাসীরা।