
বিদেশে রোজগার করে দেশে টাকা পাঠানো বাংলাদেশি প্রবাসীদের জীবনের এক সাধারণ চিত্র। কিন্তু সেই পাঠানো টাকায় দেশে জমি কেনা হলেও কখনো কখনো তা প্রবাসীর নামে না হয়ে বাবা, ভাই বা আত্মীয়দের নামে রেজিস্ট্রি হয়। ফলে দেশে ফিরে দেখা যায়, নিজের নামে কিছুই নেই। বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন প্রবাসী শ্রমিক।
এই সমস্যার বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যায় কুমিল্লার মোহাম্মদ ফারুক সরকারের ঘটনায়। তিনি ১৬ বছর ধরে দুবাইয়ে ছিলেন। সেখানে গাড়ি চালানো ও পরে স্ক্র্যাপ ব্যবসা করে আয় করতেন। পরিবারের অনুরোধে দেশে টাকা পাঠিয়ে ছোট ভাইয়ের নামে জমি কেনেন। কিন্তু ব্যবসায় ক্ষতির পর দেশে ফিরে দেখেন, জমির মালিকানা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ফারুক।
এই ঘটনা শুধু একটি নয়। প্রবাসী শ্রমিকদের জমি বিনিয়োগে প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক প্রবাসী দেশে জমি কিনে পরিবারের নামে রেজিস্ট্রি করেন। কারণ তারা বিশ্বাস করেন, পরিবারই তাদের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু দেশে ফিরে দেখা যায়, সেই জমি বিক্রি হয়ে গেছে বা অন্যের নামে রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যার মূল কারণ হলো প্রবাসীদের আইনি সচেতনতার অভাব এবং পারিবারিক বিশ্বাসের অপব্যবহার। জমি কেনার সময় নিজের নামে রেজিস্ট্রি না করায় ভবিষ্যতে মালিকানা দাবি করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় ভাই বা বাবার নামে জমি কিনে রাখলেও তারা তা নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে দাবি করেন।
আইনজীবীরা পরামর্শ দেন, প্রবাসীরা দেশে জমি কিনলে অবশ্যই নিজের নামে রেজিস্ট্রি করতে হবে। প্রয়োজনে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে জমি কেনা যেতে পারে, কিন্তু মালিকানা যেন প্রবাসীর নামে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, জমি কেনার পর নিয়মিত খোঁজ রাখা, দলিল ও খতিয়ান সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে স্থানীয় আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া জরুরি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোকে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।
এই সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন আইনি সহায়তা, পারিবারিক স্বচ্ছতা এবং প্রবাসীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য জমি বিনিয়োগ কাঠামো। নইলে বিদেশে ঘাম ঝরিয়ে উপার্জিত অর্থ দেশে এসে প্রতারণার শিকার হবে, যার পরিণতি হতে পারে নিঃস্ব হওয়া, মানসিক বিপর্যয়, এমনকি আত্মহনন।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট