সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম
মালয়েশিয়ায় বোয়েসেলের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে শ্রমিক পাঠানো যেতে পারে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪৭

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব।জনশক্তি রফতানির সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী। এখাতে স্বচ্ছতা, প্রবাসী ও প্রবাসগামী কর্মীদের জীবন মান উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ জনশক্তি খাত নিয়ে তিনি সরব থাকেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের মালয়েশিয়া সফর, দেশটিতে শ্রমিকদের সংকট, বৈধতার সমস্যা, দেশটির বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেওয়াসহ নানা বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব স্মারক।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: মালয়েশিয়ায় প্রচুর কর্মী অবৈধ হয়ে এখন জেলে আছেন, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মানবিক সংকটই বলা যায়। সেসব শ্রমিকের বিষয়ে কী সমাধান হতে পারে? মালয়েশিয়া কি অবৈধদের বৈধতা দেবে? আপনার কী মনে হয়?
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: এখানে প্রথম যে কথাটা হচ্ছে, আমাদের কর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ হয়নি। অবৈধ নরমালি হয় না। যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যায়, তারা ঘটনাচক্রে এমপ্লয়েরদের কারণে বা ওখানকার যে এজেন্ট আছে, তাদের বিভিন্ন কারণে কর্মীরা কিন্তু অবৈধ হয়ে যায়। অথবা তাদের বিভিন্ন রকমের যখন ওয়ার্কারদের এমপ্লয়েররা তাদের বেতন-ভাতা ঠিক মতো দেয় না। তাদের যে কাজের জন্য নেওয়া হয়েছে, সেটা যখন দেয় না, তখন তারা বাধ্য হয়ে বা তাদের ওয়ার্ক পারমিট যখন রিনিউ করে না, তখন বাধ্য হয়ে তারা অন্য জায়গায় চলে যায় বা তারা অবৈধ হয়ে যায়। সেই জায়গাটাতে আমরা মনে করি ডেফিনেটলি আমাদের যেসব কর্মী এখন পর্যন্ত নবায়ন করতে পারে না বা ইলিগাল যারা আছে, তাদের লিগাল করা অত্যাবশ্যক এবং খুবই জরুরি; ইনশাল্লাহ আমাদের দুই দেশের সরকারের সমঝোতার ভিত্তিতে সেটা করা হবে।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: আরেকটি প্রশ্ন করতে চাই, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রচুর পরিমাণ মানুষ মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন, কিন্তু মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন তাদের ঢুকতে না দিয়ে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। গরিব মানুষের টাকা অপচয় হচ্ছে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই দায় কাদের?
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আপনি যেটা বলেছেন, সেখানে আমাদের যে বা যারা এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত আসছেন এখানে কিন্তু কয়েকটা ইস্যু আছে। যারা যাচ্ছে তারা কিন্তু ভিজিট ভিসায় যাচ্ছে। এখন ভিজিট ভিসায় যারা যাচ্ছে, এই দায়টা কীভাবে আপনি দেবেন? ভিজিট ভিসাটা ইস্যু করছে কারা? ইস্যু করছে তো মালয়েশিয়ান সরকার। বাংলাদেশ তো আর ভিজিট ভিসা ইস্যু করে না। তো মালয়েশিয়ান সরকারে উচিত হচ্ছে ভিসা ইস্যু করার আগেই যাচাই-বাছাই করা যে সেই সত্যিকারের ভিজিট ভিসায় যাওয়ার মতো যোগ্য কিনা। যাচাই-বাছাই করে ভিসা দিলে আসলে এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাক করা এই ধরনের ঘটনা ঘটে না। এটা আসলে আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়। সে ক্ষেত্রে দেখা গেল যে খুব ভালো ব্যবসায়ী এবং ভালো অরিজিনাল ট্যুরিস্ট যারা, তারাও কিন্তু বিভিন্নভাবে ঝামেলায় পড়ে। তো আমি মনে করি সেই জায়গাটাতে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে মালয়েশিয়ান অ্যাম্বাসি বা মালয়েশিয়ান হাইকমিশন অথবা অনলাইন এ যে ভিসা ইস্যু করে। সে ক্ষেত্রেও তারা একটা ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে যারা জেনুইন ভিজিটর তাদেরই ভিসা দেওয়া উচিত।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: সে ক্ষেত্রে এসব কাজে দালাল বা রিক্রুটিং এজেন্সির দায় দেখেন কিনা?
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: দেখি, রিক্রুটিং এজেন্সির পাঠানো কোনো লোক কিন্তু ফেরত আসছে না মালয়েশিয়ান বিমানবন্দর থেকে। কারণ রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠায় যারা এমপ্লয়মেন্ট হিসেবে যাবে, কাজের ভিসায় যাবে। কাজের ভিসার কোনো লোক কিন্তু ফেরত আসছে না। এখন যারা ফেরত আসছে এয়ারপোর্ট থেকে, তারা হচ্ছে ভিজিট ভিসায় অথবা স্টুডেন্ট ভিসায় অথবা ট্রানজিট ভিসায় কোথাও যাচ্ছে তাদের মধ্যে যা মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন মনে করছে যে সে হি ইজ নট সুইটেবল ফর ভিজিট ভিসা। ফলে তাদের সেখান থেকে ফেরত পাঠাচ্ছে।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: তাহলে কারা পাঠাচ্ছে এত লোককে ভিজিট ভিসায়? কী মনে করেন? এ বিষয়ে সরকারের কী করার আছে? সরকার কী ব্যবস্থা নিতে পারে? কারণ এর কারণে গরওব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে গিয়ে ফেরত আসার বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো দায় নাই। কারণ রিক্রুটিং এজেন্সি কোনো ভিজিট ভিসাধারী লোক পাঠায় না। এটা কিছু ট্রাভেল এজেন্সি হয়তো তারা এই ধরনের ভিসাগুলো করে থাকতে পারে। আর আমি মনে করি, এখানে একটা লোক বিদেশে যেতে চাইবেই ভিজিট ভিসায়। অনেকের এমন বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা থাকতেই পারে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, মালয়েশিয়া এয়ারপোর্ট থেকে কেন ফিরে আসতে হবে? কেন মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন তাদের আগে যাচাই-বাছাই করে ভিসা দিচ্ছে না? কেন বা ভিসা বন্ধ করছে না? সেটা করা উচিত সেই জায়গাটাতে এটা আমাদের জন্য আসলে একটু দুঃখজনক, অপমানজনকও বটে। আমি মনে করি, এটা শুরুতেই বন্ধ করা যায়। যার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা নাই, যদি মালয়েশিয়া দূতাবাস এটা করে তাহলে তাকে ভিসা দেবে না।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ কী করছে?
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: ধরুন ইউকে কি করছে? ইউকে যাচাই-বাছাই করে যাদের প্রয়োজন মনে করছে তাদের ভিসা দিচ্ছে। ইউএসএ যাদের প্রয়োজন বা যোগ্য মনে করছে, তাদের ভিসা দিচ্ছে। ইউরোপের নানা দেশও সেভাবে ভিসা দিচ্ছে। সেখান থেকে তো ভিজিট ভিসায় গিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসার সংখ্যা খুবই কম। তো সেই জায়গাতে মালয়েশিয়াতে এত বেশি পরিমাণ সংখ্যা কেন হবে? ভিজিট ভিসা ইস্যু করে কে? ইস্যু করে মালয়েশিয়ান সরকার। আমাদের সরকারের এই বিষয়টা নিয়ে... আমি মনে করি মালয়েশিয়ান দূতাবাসের বা মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা দরকার। এটাতে আমাদের ইমেজও কিন্তু ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেই জায়গাটাতে এই কথা বলা দরকার যে তুমি যাচাই-বাছাই করেই ভিসা দাও। ভিসা দিয়ে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো এটা যেমন আমাদের জন্য কষ্টকর, আমাদের দেশের জন্য কিন্তু অসম্মানজনক। যারা যাচ্ছে কিন্তু ফেরত আসতেছে, তাদের জন্যও অনেক ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বোয়েসেলের মাধ্যমে করলে কর্মীরা কীভাবে উপকৃত হবে?
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: এখানে দুইটা বিষয় আছে। একটা হচ্ছে বোয়েসেলসের মাধ্যমে যারা আরবিএ কোম্পানি রেসপনসিবল বিসনেস অ্যালাইন্সের যারা সদস্য, তারা বিনা পয়সায় মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ থেকে বা অন্য দেশ থেকে কর্মী নেয়। তারা বোয়েসেলসের মাধ্যমে গেলে বোয়েসেল বিনা পয়সায় তাদের পাঠায়। এটা হলো একটা ইস্যু। দ্বিতীয় ইস্যু হচ্ছে আমরা যে কথাটা বলেছি যে, আমরা যদি সিন্ডিকেট ১০টা এজেন্সি বা ২৫টা এজেন্সিকে যদি আমাদের টাকা দিতে হয় দেড় লক্ষ করে, যেটা আগের সরকারের সময় শ্রমিকদের দিতে হয়েছে। তো শ্রমিকরা সেই সিন্ডিকেটের এজেন্সিদের অতিরিক্ত টাকা দেবে কেন? তাহলে বোয়েসেলের মাধ্যমে করুক। বোয়েসেল একটা সরকারের প্রতিষ্ঠান। বোয়েসেল যৌক্তিক যে মাইগ্রেশন খরচগুলো দেবে, সেগুলো আমরা মেনে নেব যৌক্তিকভাবে। সেটা নির্ধারিত হবে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে। সেটা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে নেবে। বোয়েসেল সেটা একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস করে সেটা অপারেট করতে পারে। আমাদের যেসব রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি মালয়েশিয়া থেকে ডিমান্ড নিয়ে আসবে, সেই ডিমান্ডের এগেইনস্টে তারা বোয়েসেলকে একটা ফি দেবে, সেই ফিটার মাধ্যমে বোয়েসেল একটা এনওসি দেবে। সেই এনওসি দিয়ে কর্মী আমরা পাঠাতে পারি। সে ক্ষেত্রে আমরা যে আগে সিন্ডিকেটের সদস্যদের জন্য প্রত্যেক কর্মী বাবদ দিতে হয়েছিল, সেই টাকাটা আমাদের দেওয়া লাগবে না। আমরা এই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম।
মাইগ্রেসন কনসার্ন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য।
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।